দখলদার ইসরাইল একদিকে গাজায় নির্বিচারে গণহত্যা ও জাতিগত নিধন চালাচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষুধার্ত ও আহত ফিলিস্তিনিদের কাছে জরুরি ত্রাণ পৌঁছানোও বাধাগ্রস্ত করছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধের অভাবে অবরুদ্ধ গাজাবাসী মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে—যা মানবাধিকার সংস্থাগুলো যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

এ প্রেক্ষাপটে ৪৫টিরও বেশি দেশের মানবাধিকারকর্মীরা ৪৪টি জাহাজ নিয়ে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামের একটি আন্তর্জাতিক নৌবহর গঠন করেন। এর লক্ষ্য ছিল গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এবং ইসরাইলের আরোপিত অবরোধ ভাঙা। বহরে যুক্ত ছিলেন সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহীদুল আলম এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ মানবতাবাদী রুহি লরেন আখতার।
এটি ছিল ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ নৌ-সহায়তা মিশন। স্পেন ও ইতালি ফ্লোটিলার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠায়। ৫০০-র বেশি অধিকারকর্মী ও সমর্থক বহরে অংশ নেন। যাত্রাপথে ড্রোন হামলা ও নানা বাধার পরও ৪৪টি জাহাজ ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে গাজার উদ্দেশে রওনা দেয়। শেষ পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনী একে একে বেশির ভাগ জাহাজ আটক করে যাত্রীদের ইসরাইলে নিয়ে যায়। তবে মিকেনো নামের একটি জাহাজ ফিলিস্তিনি জলসীমায় প্রবেশ করে গাজায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
আন্তর্জাতিক জলসীমায় অভিযান চালিয়ে ইসরাইলি বাহিনী যোগাযোগ ব্যবস্থা কেটে দেয়, সংকেত জ্যাম করে এবং ১৩টি জাহাজ আটকায়। ফলে বিভিন্ন দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। আয়োজকরা জানান, ফ্লোটিলার মূল লক্ষ্য ছিল কেবল প্রতীকী সহায়তা নয়, বরং গাজার জন্য একটি সমুদ্রপথ খোলা।
ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। তুরস্ক এটিকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ আখ্যায়িত করে, ইরান একে আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কলম্বিয়া তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ইতালি, যুক্তরাজ্য, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়ামসহ বহু দেশও উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং আটককৃতদের মুক্তির দাবি জানায়। কলম্বিয়া এমনকি ইসরাইলি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও স্পষ্ট হলো যে গাজায় দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ ও মানবিক সংকট আর কেবল আঞ্চলিক ইস্যু নয়, বরং বৈশ্বিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন।
উল্লেখ্য, এর আগেও একাধিকবার গাজায় সহায়তা পাঠাতে ফ্লোটিলা যাত্রা করেছে। ২০১০ সালে তুরস্কের মাভি মারমারা জাহাজে ইসরাইলি কমান্ডো হামলায় ১০ জন নিহত হন, যা বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দা কুড়ায়। এরপর ২০১১, ২০১৫, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে বেশ কিছু ফ্লোটিলা যাত্রা করে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইসরাইল সেগুলো আটক করে।
গাজায় ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে—অবরোধ, অনাহার ও রোগে গাজা দ্রুত বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ সম্প্রতি গাজা শহরের লাখো বাসিন্দাকে দক্ষিণে চলে যাওয়ার চূড়ান্ত নির্দেশ দেন। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যারা রয়ে যাবে তাদের হামাসের সহযোগী হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস জানিয়েছে, যুদ্ধের মধ্যেও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের বাধ্যবাধকতা।
আমেরিকা বাংলা | আমেরিকার বাংলা খবর, কমিউনিটি ও বিশ্ব সংবাদ আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সর্বশেষ বাংলা খবর, কমিউনিটি সংবাদ ও বিশ্ব আপডেট।