“উত্তরবঙ্গে অ্যানথ্র্যাক্সের ছোঁয়া: পশু থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া”

“উত্তরবঙ্গে অ্যানথ্র্যাক্সের ছোঁয়া: পশু থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া”
“উত্তরবঙ্গে অ্যানথ্র্যাক্সের ছোঁয়া: পশু থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া”

উত্তরবঙ্গের রংপুরের পীরগাছা ও মিঠাপুকুর উপজেলার কিছু এলাকা থেকে সম্প্রতি অ্যানথ্র্যাক্সে আক্রান্ত সন্দেহভাজন মানুষের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হলে কয়েকজন রোগীর পরীক্ষায় পজিটিভ দেখা গেছে — যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীতে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। ইন্সটিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কনট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (IEDCR) ও জেলা পশু অধিদপ্তরের তথ্যভিত্তিক সংবাদসমূহে এ খবর নিশ্চিত হয়েছে।

সম্প্রতি পীরগাছায় কয়েকজন মানুষ সংক্রমণসংযুক্ত উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে গেলে তাদের মধ্যে কয়েকজনের নমুনা IEDCR-এ পাঠানো হয়; অভিজ্ঞান অনুযায়ী মোট ১২ নমুনা পরীক্ষায় ৮ জনের নমুনা পজিটিভ এসেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। একই এলাকায় মাংসে অসুস্থ গরুর তথ্য ও পশু নমুনায়ও অ্যানথ্র্যাক্স ধরা পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পশু বিভাগের উদ্যোগে ভ্যাকসিনেশন ও সচেতনতা অভিযান শুরু করা হয়েছে।

অ্যানথ্র্যাক্স কী

অ্যানথ্র্যাক্স হচ্ছে Bacillus anthracis নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট একটি জোনটিক (প্রাণী থেকে মানুষেরে সংক্রমিত) সংক্রমণ। এই ব্যাকটেরিয়ার স্পোর মাটিতে দীর্ঘদিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে এবং সংক্রমিত পশু বা তাদের দেহের অংশ/উৎপাদন থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়তে পারে। WHO ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি বলছে — এটি সাধারণত পশু বা পশুর পণ্য (কাঁচা মাংস, লোম, চামড়া) নিয়ে গিয়ে মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়; মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ খুবই বিরল।

অ্যানথ্র্যাক্সের প্রধান তিন ধরণ রয়েছে — কট্যানিয়াস (ত্বক), গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল (হজমতন্ত্র) এবং ইনহেলেশনাল (শ্বাসনালী/ফুসফুস)।

  • কট্যানিয়াস অ্যানথ্র্যাক্স: ত্বকে দাগ-চলন্ত ক্ষত (eschar), লালচে ফুসকুড়ি, সংবেদনশূন্য পৌলের মতো ভেতরে কালো ক্ষত।

  • গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল: বমি, ভাইবস, পেটব্যথা, রক্তমিশ্রিত পায়খানা।

  • ইনহেলেশনাল (শ্বাসাগত): জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট; দ্রুত জটিলতা হলে প্রাণনাশক।
    উপসর্গ সাধারণত এক থেকে ২০ দিনের মধ্যে প্রকাশ পেতে পারে — সংক্রমণের ধরন ও পরিমাণের উপর নির্ভর করে। দ্রুত চিকিৎসা না হলে বিশেষ করে ইনহেলেশনাল ধরনের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার বেশি।

পরীক্ষাপদ্ধতি ও চিকিৎসা

  • সন্দেহভাজন কেস শনাক্তের পরে ল্যাবরেটরিতে কালচার, PCR ইত্যাদি মাধ্যমে B. anthracis নিশ্চিত করা হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে নির্দিষ্ট নমুনা সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় গবেষণা ল্যাবে পাঠানো হয়।

  • চিকিৎসা: অ্যান্টিবায়োটিক—সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ডক্সিসাইক্লিন, পেনিসিলিন প্রভৃতি — প্রয়োগ করে থাকে; প্রোফাইল্যাকটিক (সম্ভাব্য সংস্পর্শে পড়লে) অ্যান্টিবায়োটিকও দেওয়ার পরামর্শ রয়েছে। সমসাময়িক গাইডলাইনে জটিল কেসে অ্যান্টিবডি বা অ্যান্টিটক্সিন থেরাপিও আলোচ্য। দ্রুত ও যথাযথ চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ।

রংপুর স্থানীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— কিছু পরিবার অসুস্থ পশু জবাই করে মাংস ব্যবহার করায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে; পশু মৃতদেহ বা আক্রান্ত মাংস সরাসরি মানবদেহে সংক্রমণের সম্ভাব্য প্রধান উৎস। পশু বিভাগ স্থানীয় জেলার কিছু ফ্রিজেন (ফ্রোজেন) গরুর মাংসে অ্যানথ্র্যাক্স ধরা পড়ার তথ্যও দিয়েছেন, যার ফলে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত পশু টিকাদান কর্মসূচি ও কোরবানিধাম/মাংস ব্যবহারে সতর্কতা প্রচার জানিয়েছে।

জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও করণীয়

  •  প্যানিক না করে পশু ও মানুষের সংস্পর্শ চেইন বিচ্ছিন্ন করা; সন্দেহভাজন পশু জবাই বা মাংস ব্যবহার না করা; রোগী হলে অবিলম্বে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
  •  পশু বিভাগ ও জেলা প্রশাসন আক্রান্ত গরুর সঠিক দাহ/নিস্তব্ধকরণ ও আশপাশের স্থানে ভ্যাকসিনেশন চালু করেছে।
  • স্থানীয় হাসপাতালগুলো চূড়ান্ত নিশ্চয়তার জন্য নমুনা পাঠাচ্ছে IEDCR/কেন্দ্রীয় ল্যাবে।

প্রয়োজনীয় নির্দেশনা

  • অসুস্থ বা অস্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়া গবাদি পশুর মাংস কখনো খাওয়া বা রান্না করে খাওয়া যাবে না। যদি সন্দেহ হয়, স্থানীয় পশু বিভাগকে জানান।
  • ত্বকে আঘাত বা ক্ষত হলে বা পশু হ্যান্ডল করার পর গেলে দ্রুত মালামাল ধুয়ে ফেলুন এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখান।
  • নির্দিষ্ট নির্দেশে অনুমোদিত অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া আত্মনির্ভরভাবে ওষুধ খাওয়ার অভ্যাসে সতর্ক থাকুন — চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • সরকারি প্রচার, পশু টিকাদান কর্মসূচি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন; গেমফ্রি বা সামাজিক মিডিয়ায় কুৎসিত গুজব ছড়াবেন না — তথ্য সরকারী সূত্র থেকে সাপেক্ষে গ্রহণ করুন।

 কেন বারবার হয়

অ্যানথ্র্যাক্সের স্পোর মাটিতে দীর্ঘকাল টিকে থাকতে পারে; বন্যা, মাটি পরিবর্তন বা পুষ্পক্শেত্রে গভীর চাষের ফলে সেগুলো উপরের দিকে উঠে আসে এবং পশুরা তা খেয়ে সংক্রমিত হয় — ফলে নোর্থার্ন অঞ্চলে সময়কে করে-করে পুনরায় বাড়তে পারে। অতীতে বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চলে বারবার অ্যানথ্র্যাক্সের অ্যালার্ট দেখা গেছে; তাই নিয়মিত ভ্যাকসিনেশন, মৃত পশুর সঠিক নিষ্পত্তি ও সার্বিক পশু-মানব নজরদারি জরুরি। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গবেষণা রিপোর্টেও ইতিহাস-ভিত্তিক বিশ্লেষণে একই বিষয় উঠে এসেছে।

আরও দেখুন

টুঙ্গিপাড়ায় ডাব পাড়াকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আহত ১৫

স্থানীয়রা জানায়, শ্রীরামকান্দি গ্রামের রোহান উস্তা (২০) ও গওহরডাঙ্গার সুমন খানের (১৮) মধ্যে গাছের ডাব …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *