ওয়াশিংটন ডিসি, ১৪ আগস্ট ২০২৫: যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের টহল শুরু হওয়ায় দেশব্যাপী আলোচনা ও সমালোচনা তুঙ্গে। রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প “ক্রাইম ইমার্জেন্সি” ঘোষণা দিয়ে ডিসি মেট্রোপলিটন পুলিশকে সরাসরি ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন এবং প্রায় ৮০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করেছেন। যদিও সরকারি অপরাধের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৫ সালে সহিংস অপরাধ গত তিন দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে, তবুও ট্রাম্প দাবি করছেন, “ডিসিকে আবার নিরাপদ করতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।”
আইনগত ভিত্তি ও ক্ষমতার প্রয়োগ
রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প District of Columbia Home Rule Act এর Section 740 এর আওতায় এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই ধারা অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য ডিসির পুলিশ বাহিনীকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেন, তবে এই সময়সীমা বাড়াতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন।
এই আইনের প্রয়োগকে বিরল ও ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ ডিসির নিজস্ব নির্বাচিত প্রশাসনকে পাশ কাটিয়ে ফেডারেল সরকার সরাসরি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নামল।
ন্যাশনাল গার্ডের ভূমিকা
ডিফেন্স সেক্রেটারি পিট হেগসেথ জানিয়েছেন, ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা Title 32 প্রশাসনিক দায়িত্বের অধীনে কাজ করবেন। এর মানে তারা সরাসরি আইন প্রয়োগে অংশ নেবেন না, বরং—
- ফেডারেল ভবন ও জমির আশেপাশে দৃশ্যমান নিরাপত্তা নিশ্চিত করা,
- লজিস্টিকস ও প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান,
- প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে জরুরি সহায়তা দেওয়া।
তবে সমালোচকরা মনে করছেন, সেনাবাহিনীর দৃশ্যমান উপস্থিতি রাজধানীতে অস্বাভাবিক উত্তেজনা ও ভয় তৈরি করছে।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
- ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউজার এই পদক্ষেপকে “রাজনৈতিক নাটক” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা কোনো হেলস্কেপ নই; ডিসি একটি প্রাণবন্ত ও সুন্দর শহর।”
- ধর্মীয় নেতারা যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন: “Fear is not a strategy for safety” — অর্থাৎ ভয়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা কৌশল গড়া উচিত নয়।
- মানবাধিকার সংগঠনগুলো সতর্ক করেছে যে, ফেডারেল নিয়ন্ত্রণ ও সামরিক উপস্থিতি নাগরিক স্বাধীনতা ও স্থানীয় স্বশাসন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
রাজনৈতিক প্রভাব
বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ শুধু আইনশৃঙ্খলা নয়, আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
- ট্রাম্পের সমর্থকরা মনে করছেন, এটি তার “শক্ত হাতে আইন প্রয়োগ” নীতির অংশ।
- বিরোধীরা বলছেন, এটি মূলত রাজনৈতিক পয়েন্ট তোলার কৌশল, যেখানে অপরাধের প্রকৃত পরিসংখ্যান উপেক্ষা করা হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
যদি কংগ্রেস এই পদক্ষেপকে অনুমোদন না দেয়, তাহলে ৩০ দিনের মধ্যে ডিসি পুলিশ আবার স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে ফিরবে। তবে এই সময়ের মধ্যে সেনা উপস্থিতি রাজধানীর জনজীবন ও রাজনৈতিক পরিবেশে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।