খুলে দেওয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের সব গেট

খুলে দেওয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের সব গেট

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অব্যাহত ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের সব’কটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, তিস্তার ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ৪ জেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তিস্তা তিরবর্তী এলাকাগুলোতে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সোমবার (১৩ আগস্ট) রাত পর্যন্ত ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ও ৯টায় তা ২ সেন্টিমিটার নিচে নেমে আসে। দুপুরের মধ্যে আবার তা বেড়ে বিপৎসীমার ওপরে চলে যায়। ফলে ইতিমধ্যে বন্যার পানি নিম্নাঞ্চলে ঢুকে পড়ছে। পানির স্রোত ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং শক্তিশালী হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডালিয়া ব্যারাজের সবক’টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, আগামী ৩ দিন এই অঞ্চলে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকতে পারে। এতে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে স্বল্পমাত্রার বন্যা দেখা দিতে পারে।

অব্যাহত বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারনে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশেষ করে, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী ও নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া ও পলাশী এবং সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের আরও বেশ কিছু নি¤œাঞ্চলে বন্যার পানি ঢুকে পড়তে পারে।

স্থানীয়রা বলছেন, ২দিন ধরে তিস্তার পানি আস্তে আস্তে বেড়ে চলেছে। ভারত তাদের গজলডোবা ব্যারেজের গেট খুলে দিলে হঠাৎ করে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য ফসল ও ঘরবাড়ি নিয়ে বেশ আতঙ্কে আছেন। পাটগ্রামের আব্দুল মতিন বলেন, আস্তে আস্তে বাড়লেও হঠাৎ কখন যে পানি হু হু করে বাড়তে শুরু করবে তা বলা যাচ্ছে না। বন্যার পানি এখনো অনেকের ঘরে ঢুকেনি, কিন্তু নদীর ধারে থাকা চরাঞ্চলের বাড়িগুলোতে পানি উঠছে। পানি বাড়লে আমাদের ঘরেও ঢুকবে। এজন্য বাড়ি ও এবং ফসলি জমি নিয়ে আতঙ্কে আছি।

পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে পাটগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া, পলাশী এবং সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জুলাইয়ের শেষ থেকে চলতি মাসে তিন দফা ছোট বন্যা হয়েছে। তবে প্রথম দুই দফায় পানি দ্রুত নেমে গেলেও এবার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে আমন ধান ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অনেক পরিবার গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানে।

মহিষখোচা ইউনিয়নের নজির হোসেন বলেন, ৩ দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, নদীর পানি ক্রমেই বাড়ছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে, গরু-ছাগল উঁচু রাস্তায় বেঁধে রেখেছি। কোনো জনপ্রতিনিধি এখনো খোঁজ নেয়নি।

পানি বৃদ্ধর ফলে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশাচাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ৫/৬টি গ্রাম ও চরাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে করে এসব গ্রামের ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া জলঢাকা, ডোমার ও কিশোরগঞ্জ উ্পজেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতেও পানি ঢুকে পড়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া এবং পীরগাছা উপজেলা এবং গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ ও সাদুল্যাপুর উপজেলার চর ও নিমাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এসব এলাকার মানুষ বন্যার আশঙ্কায় দিন যাপন করছেন।

আরও দেখুন

ওয়াসার পাঁচ বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি এক যুগেও

ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা এতটাই বেড়েছে যে এখন নতুন করে পানি তোলা প্রায় অসম্ভব …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *