
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আলে সানির কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সময় ও বার্তার দিক থেকে এই ক্ষমা প্রার্থনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
হোয়াইট হাউস থেকে জানিয়েছেন, নেতানিয়াহু যখন হোয়াইট হাউসে পৌঁছান, তখন ট্রাম্প নিজেই কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফোন করেন। তৃতীয়বার চেষ্টা করার পর ফোন রিসিভ হয় এবং ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে তাঁর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। এ সময় নেতানিয়াহু ইসরাইলের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন—যা দখলদার শক্তির পক্ষ থেকে এক বিরল ঘটনা।
সম্প্রতি দোহায় হামাসের একটি প্রতিনিধি দলকে লক্ষ্য করে ইসরাইলি হামলায় পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয় এবং কাতারের একজন নিরাপত্তাকর্মী প্রাণ হারান। যদিও প্রতিনিধি দলের কেউ নিহত হয়নি, তবু ঘটনাটি কাতারের সার্বভৌমত্বে সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নেতানিয়াহুকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হতে হয়েছে।
কাতার তাদের ওই হামলাকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও বিশ্বাসঘাতকতামূলক আগ্রাসন আখ্যা দিয়ে জানায়, দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। তবে ট্রাম্পের উদ্যোগকে তারা গ্রহণ করেছে, কারণ ওয়াশিংটনের কাছ থেকে তারা নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা আশা করছে। একইসঙ্গে কাতার গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও বন্দী বিনিময়ে মধ্যস্থতায় ভূমিকা রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে ইসরাইলি ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, দোহা শর্ত দিয়েছিল—যদি ইসরাইল ক্ষমা না চায়, তবে তারা মধ্যস্থতায় ফিরবে না। তাই নেতানিয়াহু দুঃখ প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে বিষয়টি তিনি এখনও তাঁর মন্ত্রীদের জানাননি।
রামাল্লা থেকে আল জাজিরার ব্যুরো চিফ জানিয়েছেন, ইসরাইলি গণমাধ্যম নেতানিয়াহুর এই দুঃখ প্রকাশকে বড় খবর হিসেবে প্রচার করছে। হামলার ২০ দিন পর এই ক্ষমা প্রার্থনা আসে এবং এর সঙ্গে নেতানিয়াহু প্রতিশ্রুতি দেন, ভবিষ্যতে কাতারে আর কোনো হামলা চালানো হবে না।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, এর আগে নেতানিয়াহু একবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিব এরদোগানের কাছেও ক্ষমা চেয়েছিলেন। গাজা অবরোধ ভাঙার জন্য পাঠানো মাভি মারমারা জাহাজে ইসরাইলি হামলার পর দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হলে কয়েক বছর পর তিনি এ ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। তবে এরদোগানের কাছে দুঃখ প্রকাশের চেয়েও কাতারের কাছে মাত্র ২০ দিনের মধ্যে দুঃখ প্রকাশ করা বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রামাল্লার ব্যুরো চিফ আরও জানান, নেতানিয়াহুর এই দুঃখ প্রকাশ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে গাজা যুদ্ধ বন্ধ বা যুদ্ধোত্তর সময়ে ট্রাম্পের দেওয়া প্রস্তাবের অধিকাংশ শর্ত মেনে নিতে তিনি প্রস্তুত। অনেক ইসরাইলি বিশ্লেষক এটিকে ঐতিহাসিক ভুল বলেও অভিহিত করছেন, যা যুদ্ধের গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।
স্পষ্ট হচ্ছে, নেতানিয়াহু স্বেচ্ছায় দুঃখ প্রকাশ করেননি, বরং বাধ্য হয়েছেন। বিশেষ করে জাতিসঙ্ঘে একা হয়ে পড়ার পর তাঁর সিদ্ধান্ত বদল হয়। আর এই ক্ষমা প্রার্থনাই গাজায় যুদ্ধ বন্ধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
আল জাজিরার প্রতিনিধি সোহাইব আল আসা বলেছেন, ইসরাইলের এই দুঃখ প্রকাশের ফলে কাতার মধ্যস্থতায় ফিরে আসতে পারে। কারণ কাতারি কর্মকর্তারা হামলার পর থেকে আলোচনায় অংশ নেননি। তাদের স্পষ্ট শর্ত ছিল, ইসরাইলকে নিঃশর্তভাবে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।
এভাবেই গাজা যুদ্ধের অবসানে কাতারের সক্রিয় ভূমিকা ছাড়া ট্রাম্প সফল হতে পারবেন না। নেতানিয়াহু প্রথমে কাতারের ভূমিকা এড়িয়ে চলতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।
এটি নেতানিয়াহুর জীবনের তৃতীয়বারের মতো ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা। এর আগে মোসাদের ব্যর্থ হত্যাচেষ্টার পর হামাস নেতা খালেদ মিশাল ইস্যুতে তিনি জর্ডানের প্রয়াত রাজা হোসাইন বিন তালালের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছিলেন।