জুলাই ঐক্য নষ্টের দায় কার – সমন্বয়ক নাকি অন্য কারো?

জুলাই ঐক্য নষ্টের দায় কার?
জুলাই ঐক্য নষ্টের দায় কার?

জুলাই মাসের সেই গরম দিনগুলোতে, বাংলাদেশের রাস্তায় এক অভূতপূর্ব ঝড় উঠেছিল। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন, ধীরে ধীরে একটা জনজোয়ারে পরিণত হয়। ছাত্ররা, যারা স্বপ্ন দেখে সরকারি চাকরির, তারা প্রথমে একা দাঁড়িয়েছিল।

কিন্তু দেখতে দেখতে সাধারণ মানুষ, শ্রমিক, কৃষক, শিক্ষক—সবাই যোগ দিল। ঢাকার রাস্তায়, চট্টগ্রামের গলিতে, সিলেটের পাহাড়ে—সর্বত্র একই স্লোগান: “ঐক্য, সংস্কার, ন্যায়”। সমন্বয়করা, যেমন নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদের মতো তরুণ নেতারা, এই ঐক্যের সেতুবন্ধন হয়ে উঠলেন। তারা রাত জেগে পরিকল্পনা করতেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ডাক দিতেন, এবং লাখো মানুষকে একসুতোয় বাঁধতেন।

সেই সময়, শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল—পুলিশের গুলি, ইন্টারনেট বন্ধ, ছাত্রলীগের হামলা। কিন্তু এসবের মুখে ঐক্য আরও মজবুত হলো। জুলাইয়ের শেষে, আগস্টের শুরুতে, গণঅভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতি। ৫ আগস্ট ২০২৪, সরকার পড়ে গেল। হাসিনা ভারতে পালালেন। দেশ জুড়ে উল্লাস। সমন্বয়করা হিরো হয়ে উঠলেন—তারা বললেন, এটা “মনসুন বিপ্লব”।

কিন্তু বিজয়ের পরের দিনগুলোতে, ছবিটা বদলাতে শুরু করল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে। সমন্বয়কদের মধ্যে কেউ কেউ উপদেষ্টা হলেন—আসিফ মাহমুদ, নাহিদ ইসলাম। অন্যরা বাইরে রইলেন। প্রথমে মনে হলো, ঐক্য অটুট। কিন্তু ধীরে ধীরে ফাটল দেখা দিল।

জামায়াত-শিবিরের নেতারা দাবি করতে শুরু করলেন, তারাই আন্দোলনের মূল শক্তি ছিল। একটি পাবলিক ফোরামে শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ বললেন, “কোটা আন্দোলন যখন শিথিল হয়ে যাচ্ছিল, তখন আসিফ ভাই আমাদের বাড়িতে এসে গণভবন ঘেরাওয়ের ম্যাপ আঁকলেন।

কোন কোন পয়েন্ট দখল করতে হবে, সব চিহ্নিত। সেই ম্যাপ আমার কাছে এখনও আছে।” এটা প্রকাশ করল যে, আন্দোলনটা শুধু স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না—পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রও ছিল। ছাত্ররা যখন কোটা নিয়ে লড়ছিল, তখন রাজনৈতিক দলগুলো সুযোগ নিয়ে সরকার উল্টানোর পাঁয়তারা করছিল।

এখানেই লোভের খেলা শুরু। সমন্বয়কদের মধ্যে বিভেদ। কেউ বললেন, “আমরাই আন্দোলনের মূল, শিবির কিছু করেনি।” শিবির বলল, “আমরা ছাড়া বিপ্লব হতো না।” ২০২৫-এর জুলাইয়ে, বিপ্লবের এক বছর পূর্তিতে, কালের কণ্ঠে লেখা হলো: “ক্ষমতার লোভে বিপ্লবের সর্বনাশ।”

রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যের বদলে কাদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত। প্রথম আলোতে বলা হলো, “জনগণই জুলাইয়ের ধারক,” কিন্তু সরকারের দুর্নীতি, হত্যার বিচারের ধীরগতি—সব মিলে বিশ্বাস ভেঙে যাচ্ছে। চ্যানেল ২৪-এর প্রতিবেদনে উঠে এল, ক্ষমতার লোভে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সংঘাত বাড়ছে। সমন্বয়করা, যারা একসময় ঐক্যের প্রতীক, তারা এখন ক্ষমতার পদে বসে অভিযোগের মুখে। কেউ বলেন, তারা লোভে পড়ে আন্দোলনের আদর্শ ভুলে গেছেন। নতুন সংবিধানের দাবি উঠেছে, কিন্তু বিভেদে সব থমকে আছে।

লোভ কি দায়ী? হ্যাঁ, অনেকাংশে। ইতিহাস বলে, বিপ্লবের পর লোভ ঐক্য নষ্ট করে। জুলাইয়ের ঐক্য ছিল জনগণের—ছাত্র, কৃষক, শহুরে মানুষের। কিন্তু সমন্বয়করা যখন ক্ষমতার স্বাদ পেলেন, তখন ব্যক্তিগত লাভের চিন্তা এল।

শিবিরের মতো গোষ্ঠীও সুযোগ নিল। ফলে, হত্যার বিচার, অর্থনৈতিক সংস্কার—সব পিছিয়ে পড়ল। কিন্তু এটা শেষ নয়। জুলাই শিখিয়েছে, জনগণের শক্তি অপরাজেয়। কৃষক যখন তার খেতে বসে এই গল্প শোনে, সে বোঝে—ঐক্য ছাড়া কিছু টেকে না।

শহুরে শিক্ষিত মানুষ দেখে, লোভের ফাঁদ এড়াতে হলে সতর্কতা দরকার। বিপ্লবের আগুন এখনও জ্বলে। যদি আমরা সবাই মিলে লোভকে জয় করি, তাহলে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। ঐক্য ফিরবে, স্বপ্ন পূরণ হবে। এই আশায়, জুলাইয়ের গল্প চলতে থাকবে।

আরও দেখুন

বিসিবির নির্বাচনে বাধা নেই, ১৫ ক্লাব পারবে অংশ নিতে

বিসিবি নির্বাচনে জেলা ও বিভাগের অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর চেয়ে বি‌সি‌বি সভাপ‌তি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *