ট্রাম্পের কড়াকড়িতেও যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা

ট্রাম্পের কড়াকড়িতেও যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা
ট্রাম্পের কড়াকড়িতেও যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা

আমেরিকা বাংলা ডেস্ক: এক সময় “আমেরিকা যাওয়া” ছিল যেন এক দূরের স্বপ্ন—পাসপোর্টে ভিসা লাগবে, টিউশন ফি কেমন করে দেব, এসব ভাবতেই হিমশিম খেত অনেকেই। কিন্তু আজ সেই চিত্র পুরোই বদলে গেছে।

এখন আমেরিকার আকাশের নিচে প্রতিদিনই নতুন নতুন স্বপ্ন জেগে উঠছে—আর সেই স্বপ্নের নাম বাংলাদেশি ছাত্ররা।

২০২৫ সালের পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এখন ১৭,০৯৯ জন বাংলাদেশি ছাত্র পড়াশোনা করছে—গত বছরের তুলনায় ২৬% বেশি। সংখ্যাটা শুধু একটা হিসাব নয়; এর পেছনে আছে হাজারো তরুণ-তরুণীর ঘাম, ধৈর্য আর নিঃশব্দ লড়াই। কেউ চট্টগ্রামের গ্রামের স্কুল থেকে উঠে এসেছে, কেউ ঢাকার ব্যস্ত শহর পেরিয়ে পৌঁছেছে হার্ভার্ড বা স্ট্যানফোর্ডে। সবাই মিলে যেন লিখছে এক নতুন ইতিহাস।

🎓 ফুল ফান্ডিংয়ে স্বপ্নপূরণ

হার্ভার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, টেক্সাস—যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামই বলো না কেন, এখন সেখানে বাংলাদেশি মুখ পাওয়া যায়।

বেশিরভাগই ফুল ফান্ডিং পেয়েছে—টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া এমনকি ভ্রমণ খরচ পর্যন্ত কভার করে এমন স্কলারশিপ।

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশি ছাত্রদের জন্য এসব স্কলারশিপের পরিমাণ ১৫,০০০ থেকে ৪ লাখ ডলার পর্যন্ত।

আর সবচেয়ে বড় সুখবর? এখন অনেক প্রোগ্রামেই আইইএলটিএস বা টোফেল লাগছে না, ইংরেজি মাধ্যমে পড়া ডিগ্রি থাকলেই চলছে!

এই কারণেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ছাত্র উৎস দেশ।

স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত) আর বিজনেস প্রোগ্রামেই সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

🌆 প্রবাসের মাটিতে নতুন অধ্যায়

আজ নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি কিংবা ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তায় হাঁটলে দেখা যায় “লিটল বাংলাদেশ”—যেখানে দোকানের সাইনবোর্ড, খাবারের ঘ্রাণ, আর কথাবার্তায় ভেসে আসে দেশের গন্ধ।

এই সম্প্রদায় এখন আমেরিকায় এক শক্তিশালী গোষ্ঠী।

পিউ রিসার্চ সেন্টার জানাচ্ছে, বাংলাদেশি আমেরিকানদের সংখ্যা এখন ২৭২,৩৩৮, এবং মোট বাংলাদেশি ডায়াস্পোরা প্রায় ৫ লাখ ছাড়িয়েছে।

তাদের ৯৫% এখনো গর্বের সঙ্গে বলে—“আমি বাংলাদেশি।”

এই প্রজন্ম শুধু রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে না, বরং বিনিয়োগ, নেটওয়ার্কিং আর শিক্ষায় এক নতুন যুগ তৈরি করছে।

‘আমেরিকান বাংলাদেশি কমিউনিটি হেল্প’-এর মতো ফেসবুক গ্রুপে ৪০ হাজারেরও বেশি সদস্য একে অপরকে স্কলারশিপ, ভিসা, কিংবা ক্যারিয়ার গাইডেন্সে সহায়তা করছে।

✨ এক প্রজন্মের জয়ের গল্প

একজন প্রবাসী মা হয়তো বলেন, “আমি নিজের স্বপ্নটা দেখতে পাই আমার মেয়ের চোখে।”

আর সেই মেয়েটি হয়তো এখন এমআইটির ল্যাবরেটরিতে কাজ করছে, বা কোনো বহুজাতিক কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করছে।

এই গল্পগুলোই দেখায়—কীভাবে একটি দেশ, ছোট্ট এক স্বপ্ন, আর অগাধ পরিশ্রম মিলিয়ে তৈরি হয় নতুন ভবিষ্যৎ।

🇧🇩 জাতীয় গৌরবের অধ্যায়

এ সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং বাংলাদেশের এক সম্মানের প্রতীক।

এই তরুণ প্রজন্ম একদিন ফিরে এসে তাদের শেখা জ্ঞান, প্রযুক্তি, আর অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশের কৃষি, শিক্ষা, প্রযুক্তি, ও অর্থনীতিতে নতুন আলো জ্বালাবে।

মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট বলছে—বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪র্থ বৃহত্তম অভিবাসন উৎস দেশ।

তাই আজ প্রতিটি প্রবাসী পরিবার, প্রতিটি তরুণ, এমনকি যারা কেবল স্বপ্ন দেখছে—তাদের জন্য এই রেকর্ড এক প্রেরণা।

স্বপ্নের দেশ শুধু আমেরিকা নয়, স্বপ্নের দেশ হতে পারে বাংলাদেশও, যদি আমরা সেই স্বপ্নের আগুনটা জ্বালিয়ে রাখি।

📜 শেষ কথা:

২০২৫ সালের এই গল্পটা এক প্রজন্মের জয়যাত্রার গল্প।

যারা সীমান্ত পেরিয়ে স্বপ্ন ছুঁয়েছে, তারা প্রমাণ করেছে—বাংলাদেশের তরুণেরা শুধু দেশেই নয়, বিশ্বমঞ্চেও উজ্জ্বল হতে জানে।

তাদের এই পথচলা আমাদের সবার গর্ব, আমাদের সবার আশা।

আরও দেখুন

নেতিবাচক জনমত জরিপের ফলে অভিবাসন প্রয়োগ কৌশল বদলাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন!

ইমা এলিস | নিউইয়র্ক প্রতিনিধি: নেতিবাচক জনমত জরিপের চাপে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ (ডিএইচএস) অভিবাসন …