ট্রাম্পের পরিকল্পনা শান্তি আনবে নাকি প্রহসন?

ট্রাম্পের পরিকল্পনা কতটা শান্তি আনবেআমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার জন্য ২১ দফা একটি পরিকল্পনা দিয়েছেন। এর মূল লক্ষ্য হলো যুদ্ধ থামানো, জিম্মিদের মুক্ত করা, গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানো এবং ধীরে ধীরে গাজা পুনর্গঠন করা।

প্রস্তাবের প্রধান দিকগুলো:

  • ইসরাইল যদি চুক্তি মেনে নেয়, তাহলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব জিম্মি মুক্তি পাবে। এর বিনিময়ে কিছু ফিলিস্তিনি বন্দীকে ছেড়ে দিতে হবে।
  • হামাসকে নিরস্ত্র হতে হবে, অর্থাৎ তাদের অস্ত্র জমা দিতে হবে। চাইলে তারা গাজা ছেড়ে যেতে পারবে, কিন্তু শাসনে অংশ নিতে পারবে না।
  • গাজার প্রশাসন চালাবে ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের (অরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ) একটি অস্থায়ী সরকার, যার তদারকি করবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও আরব দেশগুলোর সমন্বিত একটি সংস্থা।
  • গাজার অবকাঠামো পুনর্গঠন করা হবে, বাণিজ্যের জন্য ‘ফ্রি ইকোনমিক জোন’ গড়া হবে।
  • কোনো গাজাবাসীকে জোর করে তাড়ানো হবে না, বাইরে থেকে যারা ফিরতে চাইবে তারা ফিরতে পারবে।
  • আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী গাজায় মোতায়েন হবে, তারা ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনী তৈরি করবে।
  • ইসরাইল প্রতিশ্রুতি দেবে যে গাজাকে আর দখল করবে না এবং ধাপে ধাপে সৈন্য প্রত্যাহার করবে।

পক্ষগুলোর অবস্থান:

ইসরাইল: দ্রুত জিম্মি মুক্তি ও হামাসকে নিরস্ত্র করতে চায়। তবে তারা চায় ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আইডিএফ যেন গাজায় ঢুকতে পারে।

হামাস: অস্ত্র ছাড়তে রাজি নয় যতক্ষণ ফিলিস্তিনিদের স্থায়ী সমাধান ও স্বাধীনতা নিশ্চিত না হয়। তারা বিদেশি প্রশাসন বা টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্ব মেনে নিতে প্রস্তুত নয়।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও আরব দেশগুলো: মানবিক সাহায্য ও জিম্মি মুক্তি চায়, কিন্তু চুক্তির ভাষা আরও নমনীয় করতে চাইছে। তারা শান্তিরক্ষী বাহিনীকে গাজার ভেতরে নয়, সীমান্তে মোতায়েন দেখতে চায়।

বিতর্কিত দিক – টনি ব্লেয়ার:
ট্রাম্প প্রশাসন চায় অস্থায়ী প্রশাসনের প্রধান হিসেবে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার থাকুন। কিন্তু তার ইরাক যুদ্ধের ভূমিকা ও ইসরাইলপন্থী ভাবমূর্তির কারণে ফিলিস্তিনিরা ও কাতার তাকে মানতে রাজি নয়। তাদের আশঙ্কা, এতে প্রকৃত স্বাধীনতার বদলে গাজায় বিদেশি নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেয়া হবে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট:

  • পরিকল্পনাটি এসেছে এমন সময়ে যখন জাতিসংঘ বিশ্ব সম্প্রদায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে।
  • যুক্তরাষ্ট্রে জনগণের বড় অংশ ইসরাইলকে সামরিক সাহায্য দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
  • সৌদি আরব, কাতার, মিসর, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে।
  • যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালিও এটিকে শান্তির সুযোগ হিসেবে দেখছে।

চ্যালেঞ্জ:

  • হামাস অস্ত্র ছাড়বে কি না অনিশ্চিত।
  • ইসরাইল গাজায় সামরিক স্বাধীনতা ধরে রাখতে চায়, যা চুক্তিকে দুর্বল করতে পারে।
  • ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ চায় গাজার ভবিষ্যৎ শাসন আরও ফিলিস্তিনকেন্দ্রিক হোক।
  • শান্তিরক্ষী বাহিনী গাজার ভেতরে থাকবে নাকি সীমান্তে, তা নিয়েও বড় বিতর্ক।

ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা কাগজে-কলমে শান্তির একটি পথ দেখাচ্ছে—যুদ্ধ বন্ধ, বন্দী মুক্তি, গাজা পুনর্গঠন এবং ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বাস্তবে এটি কার্যকর করা কঠিন। হামাসের অস্ত্র ছাড়ার শর্ত, ইসরাইলের সামরিক নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা এবং টনি ব্লেয়ারের বিতর্কিত ভূমিকা পুরো প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করে তুলছে।

আরও দেখুন

ট্রাম্পের পাকিস্তানমুখী প্রবণতায় ভারতের উদ্বেগ

আমেরিকা বাংলা ডেস্ক: পাকিস্তানে হোয়াইট হাউসের ক্রমবর্ধমান মনোযোগ এমন এক সময়ে আসছে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *