এই সপ্তাহেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির আমেরিকার এক উচ্চপদস্থ জেনারেলের সঙ্গে হাসিমুখে হাত মেলানো দৃশ্যে ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন। এটাই তার চলতি গ্রীষ্মে দ্বিতীয়বারের মতো আমেরিকায় উষ্ণ অভ্যর্থনা পাওয়ার ঘটনা।
আমেরিকার সামরিক বাহিনীর মধ্যপ্রাচ্য কমান্ডের অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডার জেনারেল মাইকেল কুরিলারকে সম্মান জানাতে সম্প্রতি ফ্লোরিডা গিয়েছিলেন আসিম মুনির। এর আগে, জেনারেল কুরিলা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে ‘বিস্ময়কর অংশীদার’ হিসেবে প্রশংসা করেছিল। এছাড়া, আসিম মুনির আমেরিকার শীর্ষ সেনাকর্মকর্তা জেনারেল ড্যান কেউনকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণও দিয়েছেন।
গত জুনে ওয়াশিংটনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দুই ঘণ্টার ব্যক্তিগত লাঞ্চে অংশ নিয়েছিলেন মুনির। ওই লাঞ্চের মাত্র এক মাস আগে পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আসিম মুনিরের মতো একজন সেনা প্রধানের এ ধরনের আমেরিকান অভ্যর্থনা অনেকের জন্য বিস্ময়কর। যদিও তিনি পাকিস্তানের সরকারপ্রধান নন, কিংবা কোনো সরকারি পদে নেই, তার সামাজিক ও সামরিক প্রভাব অনেক বেশি। ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক খারাপ হবে, কারণ ট্রাম্প পাকিস্তানকে ‘মিথ্যা ও প্রতারণা’ করার অভিযোগ করেছিলেন।
কিন্তু বাস্তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বিকশিত হচ্ছে, যা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ। ভারতে এখন ওয়াশিংটন থেকে অবজ্ঞার পরিবেশ বিরাজ করছে, যদিও পূর্বে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান বলছেন, ‘আমেরিকা-পাকিস্তানের সম্পর্ক এখন বিস্ময়করভাবে বদলেছে, এক নতুন রেনেসাঁ শুরু হয়েছে। পাকিস্তান দক্ষতার সঙ্গে বুঝতে পেরেছে কীভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো অনিশ্চিত নেতৃত্বের সঙ্গে কাজ করতে হয়।’
ভারত ও পাকিস্তানের বিপরীত কূটনৈতিক অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিকে প্রভাবিত করছে এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কেও ছাপ ফেলেছে। আমেরিকা পাকিস্তানের ওপর মাত্র ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যেখানে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে।
ট্রাম্প পাকিস্তানের সঙ্গে তেলভাণ্ডারের উন্নয়নে চুক্তি করেছেন এবং আরও বিনিয়োগের সম্ভাবনাও রয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটে থাকা পাকিস্তান এসব চুক্তির মাধ্যমে মুক্তির আশা করছে।
পাকিস্তানের শীর্ষ সেনাপ্রধানরা ‘তোষামোদি অভিযান’-এর মাধ্যমে আমেরিকার সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংযোগ এবং জ্বালানি ও প্রযুক্তি খাতে চুক্তি করেছেন, যা আমেরিকার নতুন মুগ্ধতার কারণ।
ইসলামাবাদের বিশ্বাস, আফগানিস্তানে ন্যাটোর বিরুদ্ধে তালেবানকে সহায়তার অভিযোগের মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার মিত্রদের উপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে হবে।
মে মাসে ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষের পর যুদ্ধবিরতি স্থাপনে ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিয়েছে ইসলামাবাদ এবং তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করেছে।
আমেরিকায় দাঁড়িয়ে আসিম মুনির বলেন, ট্রাম্পের ‘কৌশলগত নেতৃত্ব’ বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধে শান্তি আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি বলেন, ‘ট্রাম্পের প্রয়োজন ছিল সফলতার গল্প, এবং পাকিস্তান তা দিয়েছে।’
অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি স্থাপনে ট্রাম্পের ভূমিকা প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভারতের জন্য এখন ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্ক একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।