“ডাকসু ইতিহাস: সংগ্রামের সগৌরব, চিরন্তন পাঠ ও ক্যাম্পাসে গণতন্ত্রের সাক্ষী”

“ডাকসু ইতিহাস: সংগ্রামের সগৌরব, চিরন্তন পাঠ ও ক্যাম্পাসে গণতন্ত্রের সাক্ষী”

প্রতিষ্ঠা ও প্রথম কাঠামো

  • প্রবর্তন
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঠিক এক বছর পর, ১৯২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে গঠিত হয় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ’। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে এটি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’ নামে পরিচিতি লাভ করে|

  • প্রাথমিক কাঠামো
    প্রতিষ্ঠাকালে সংসদ গঠিত হতো বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন হল—ঢাকা হল, মুসলিম হল ও জগন্নাথ হল—থেকে একজন করে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনোনীত একজন শিক্ষকসহ। ১৯২৫ সালের ৩০ অক্টোবর সাধারণ সভায় খসড়া গঠনধর্মিক পাস হয়|

  • প্রথম নির্বাচিত নেতা
    ১৯৫৩ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হন সহ-সভাপতি এস. এ. বারী ও সাধারণ সম্পাদক জুলমত আলী খান|

সংগ্রামী ভূমিকা ও জাতীয় ইতিহাসে অবদান

  • অভ্যুত্থানের মঞ্চ
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডাকসু ছিল ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শক্তিশালী প্রবল চালক|

  • ৬৯-এর গণ-আন্দোলন
    ভিপি তোফায়েল আহমদের নেতৃত্বে গঠিত ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ ঘোষণ করেন ১১ দফা কর্মসূচি, যা পরবর্তীতে ব্যাপক গণ-সংগ্রামে রূপ নেয় এবং প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে পদত্যাগে বাধ্য করে|

  • ১৯৭১ সালে পতাকা উত্তোলন
    ডাকসুর ভিপি (১৯৭১) আ. স. এম. আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র-চিহ্নিত পতাকা উত্তোলন করেন—এটি স্বাধীনতার অন্যতম অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা|

  • স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন
    ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ডাকসু প্রধান ভূমিকা পালন করে। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে ডাকসুসহ নানা ছাত্র সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে তৎকালীন শাসক এরশাদকে পদত্যাগে বাধ্য করে|

নির্বাচন—অপর্যাপ্ত আয়োজন ও রাজনৈতিক প্রভাব

  • সংবাদমাধ্যম সংগ্রহশালা
    ডাকসু ভবনের নিচে রয়েছে সংগ্রহশালা, যেটিতে রয়েছে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক সংগ্রাম, শহীদের স্মৃতি—সবকিছু সযত্নে সংরক্ষিত।

  • নির্বাচন বিরতি ও পুনরুজ্জীবন
    স্বাধীন বাংলাদেশের পর থেকে (১৯৭২–১৯৯০) ডাকসু মাত্র ৭ বার নির্বাচন হয়। ১৯৯০ সালের জুনে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়; দীর্ঘ ২৮ বছর কোনো নির্বাচন হয় না ।

  • সাম্প্রতিক নির্বাচন
    দীর্ঘ বিরতির পর, ২০১৯ সালে শেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এর পর থেকে আবার নির্বাচন বন্ধ। শিক্ষার্থীরা অধিকার আদায়ে ডাকসুর দ্রুত পুনরউদ্বোধন চান ।

চিরন্তন পাঠ

  • জনগণের পাশে দাঁড়ানো
    রাজনৈতিক সংকট মুহূর্তে ডাকসুর নেতারা সদা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে; ডাকসু ছিল কর্তৃপক্ষের নয়, জনগণের শক্তি।

  • গণতন্ত্রের শিক্ষা
    ক্যাম্পাসে সংলাপ, বিতর্ক ও আন্দোলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা করিয়েছে যুগে যুগে।

  • নেতৃত্ব সৃষ্টি
    ডাকসু থেকেই সংগঠিত জাতীয় নেতারা—যারা পরবর্তীতে দেশ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

  • অধিকার ও উত্তরাধিক্য রক্ষাসূত্র
    সংগ্রহশালা, আন্দোলনের ইতিহাস, প্রতীক—all মিলিয়ে ডাকসু আজও দাঁড়িয়ে আছে আন্দোলন, স্বাধীনতাঅধিকার রক্ষার এক অনন্য প্রতীক হিসেবে।

আরও দেখুন

ফ্যাসিস্ট দোসর আফ্রিদি বেরিয়ে আসছে যে ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের ছক!

ফ্যাসিস্ট দোসর আফ্রিদি বেরিয়ে আসছে যে ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের ছক!

জুলাই গণহত্যার হত্যা মামলার আসামি ফ্যাসিস্ট দোসর ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদিকে বরিশাল থেকে গতকাল গ্রেফতার করেছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *