
আমেরিকা বাংলা ডেস্ক: প্রতি বছর যখন যুক্তরাষ্ট্রে ডিভি লটারির ফলাফল বের হয়, তখন হাজারো বাংলাদেশির মনে একটাই প্রশ্ন ঘোরে—আমাদের দেশের নামটা কই? কেন বাংলাদেশ নেই সেই তালিকায়? আর কখনও কি ফিরতে পারবে বাংলাদেশ?
এই প্রশ্নের উত্তরটা একটু ধৈর্য নিয়ে শোনা দরকার, কারণ এর পেছনে আছে বেশ বাস্তব এক কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, যেসব দেশ থেকে গত পাঁচ বছরে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পারিবারিক বা চাকরিভিত্তিক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে চলে গেছেন, সেই দেশগুলোকে বলা হয় “উচ্চ অভিবাসন” দেশ। অর্থাৎ, ওই দেশ থেকে এত মানুষ ইতোমধ্যে গ্রিন কার্ড পেয়েছে যে, সেখানে আর লটারির সুযোগ রাখার দরকার হয় না।
এই তালিকাতেই জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০১২ সাল থেকে আমরা ডিভি লটারির বাইরে আছি। কারণ ওই সময় পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। তখন থেকে আজ পর্যন্ত সেই সংখ্যা আরও বেড়েই চলেছে।
ভাবুন তো, যুক্তরাষ্ট্রে এখন কত হাজার বাংলাদেশি আছেন যারা পড়াশোনা, ব্যবসা বা পরিবার নিয়ে সেখানে স্থায়ী হয়েছেন। তাঁদের একেকজনের পরিবার বা আত্মীয়ের মাধ্যমে আরও কেউ না কেউ যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। ফলে এই প্রবাহটা থামেনি। আর এই প্রবাহই আমাদের “ডিভি লটারির তালিকা” থেকে দূরে রেখেছে।
তবে প্রশ্নটা এখানেই—ফিরে আসা কি অসম্ভব? আসলে অসম্ভব নয়, কিন্তু খুব কঠিন।
কারণ প্রতি বছর মার্কিন সরকার সব দেশের অভিবাসন সংখ্যা পর্যালোচনা করে। যদি কোনো দেশের অভিবাসীর সংখ্যা টানা পাঁচ বছরে ৫০ হাজারের নিচে নেমে আসে, তাহলে সেই দেশ আবার ডিভির যোগ্য হয়।
অর্থাৎ, বাংলাদেশকে ফের সেই তালিকায় ফিরে আসতে হলে পাঁচ বছরের গড় হিসাবটা অনেক কমে আসতে হবে। কিন্তু বর্তমান পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছরই বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ছে, কমছে না। তাই খুব শিগগিরই তালিকায় নাম ফেরার সম্ভাবনা বাস্তবে খুবই ক্ষীণ।
তবে এখানেও আছে কিছু ব্যতিক্রমী সুযোগ। যেমন ধরুন, আপনি বাংলাদেশের নাগরিক, কিন্তু আপনার স্ত্রী বা স্বামী এমন কোনো দেশে জন্মেছেন যা ডিভির জন্য যোগ্য। সেই ক্ষেত্রে আপনি তাঁর জন্মদেশের ভিত্তিতে আবেদন করতে পারবেন। একে বলা হয় “স্পাউস চার্জেবিলিটি” নীতি।
আবার যদি আপনার জন্ম হয়েছে এমন কোনো দেশে যেখানে আপনার বাবা-মা তখন সাময়িকভাবে ছিলেন, কিন্তু তাঁদের জন্ম অন্য দেশে—তাহলে আপনার আবেদনটি বাবামায়ের জন্মদেশ অনুযায়ী বিবেচনা করা যায়। এই নিয়ম অনেকের জন্য ছোট্ট হলেও গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করে দেয়।
এই সব ব্যতিক্রম বাদে, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য আপাতত ডিভি লটারির দরজা বন্ধই। তবে দরজা বন্ধ মানে চিরতরে বন্ধ নয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছরই নতুন তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকায় যদি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অভিবাসন হার কমে আসে, তাহলে নামটা আবারও ফিরে আসতে পারে।
এখন অনেকে বলেন, “আমরা যদি লটারিতে না পারি, তাহলে আমেরিকায় যাওয়ার সুযোগ শেষ?” একদম না। যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা, কর্মসংস্থান বা ব্যবসার মাধ্যমেও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ এখনও খোলা। অনেকেই সেই পথেই আজ যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হয়েছেন।
তাই হতাশ না হয়ে বাস্তবতাটা জানা জরুরি। ডিভি লটারি একমাত্র পথ নয়, বরং বহু পথের মধ্যে একটা মাত্র বিকল্প।
সংক্ষেপে বললে, বাংলাদেশ এখন “উচ্চ অভিবাসন” দেশ হিসেবে ডিভির তালিকা থেকে বাইরে। ফিরতে হলে আগামী বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের হার অনেক কমতে হবে, যা আপাতত খুবই কঠিন।
তবে সুযোগ পুরোপুরি শেষ নয়। প্রতি বছর নতুন তালিকা প্রকাশ হয়, তাই সরকারিভাবে ঘোষিত ওয়েবসাইটে চোখ রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। হয়তো একদিন সেই তালিকায় আবার
ও দেখা যাবে—বাংলাদেশের নাম।
আমেরিকা বাংলা | আমেরিকার বাংলা খবর, কমিউনিটি ও বিশ্ব সংবাদ আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সর্বশেষ বাংলা খবর, কমিউনিটি সংবাদ ও বিশ্ব আপডেট।