
কী এই তিন বিঘা করিডোর?
ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তে পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ উপ-জেলায় অবস্থিত একটি সরু ভূখণ্ড-সেতু, যা লালমনিরহাটের পাটগ্রাম হয়ে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দহগ্রাম–আঙ্গরপোতাকে যুক্ত করে। ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা–মুজিব স্থলসীমান্ত চুক্তিয় ভারত চিরস্থায়ী লিজে (perpetuity) ১৭৮ মিটার × ৮৫ মিটার আকারের এই অংশ বাংলাদেশি লোকজনের চলাচলের জন্য দেওয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে।
সময়রেখা: চুক্তি থেকে ২৪ ঘণ্টা উন্মুক্ত
-
১৯৭৪: সীমান্ত-জট মেটাতে স্থলসীমান্ত চুক্তি; করিডোরের মাত্রা ও লিজের বিধান নির্দিষ্ট।
-
১৯৯২ (২৬ জুন): আংশিক চালু—প্রথমে প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা খোলা। পরে ধাপে ১২ ঘণ্টা করা হয়।
-
২০১১ (৬ সেপ্টেম্বর): নয়াদিল্লি–ঢাকার শীর্ষ বৈঠকে ২৪ ঘণ্টা প্রবেশাধিকার দেওয়ার ঘোষণা।
-
২০১১ (১৯ অক্টোবর): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করিডোর দিয়ে দহগ্রাম–আঙ্গরপোতা সফর ও ২৪ ঘণ্টা চলাচল কার্যকর ঘোষণা; ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি ও বাংলাদেশি গণমাধ্যমে এর নিশ্চিতকরণ আছে।
নোট: ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকলেও প্রতিদিন ১ ঘণ্টা ভারতীয় বিএসএফ পতাকা উত্তোলন প্রথাসংশ্লিষ্ট কারণে চলাচল স্থগিত রাখে—এ তথ্য নানা বর্ণনায় এসেছে।
কেন এ করিডোর গুরুত্বপূর্ণ?
১) মানবিক সংযোগ
করিডোর চালুর আগে এনক্লেভবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা, বাজার, শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলা—সবকিছুর জন্য সীমাহীন বাধা ছিল। ২৪ ঘণ্টা খোলার ফলে বাস্তব জীবনে বড় স্বস্তি আসে; স্থানীয় উন্নয়ন সূচকে ইতিবাচক প্রভাবের গবেষণাভিত্তিক ইঙ্গিতও আছে।
২) কূটনৈতিক সেতুবন্ধ
দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর ২০১৫ সালের **হালনাগাদ স্থলসীমান্ত চুক্তি (LBA)**তে দুই দেশ ঐতিহাসিকভাবে ১৬২টি ছিটমহলের বিনিময় সম্পন্ন করে—বাংলাদেশে ভারতীয় ১১১টি এবং ভারতে বাংলাদেশি ৫১টি—নাগরিকত্ব বেছে নেওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়। দহগ্রাম–আঙ্গরপোতা কিন্তু বাংলাদেশেই থেকে যায় এবং এই করিডোরই তার ‘লাইফলাইন’।
৩) আইনি–প্রশাসনিক কাঠামো
করিডোর ভারতীয় সার্বভৌম ভূখণ্ড হলেও চিরস্থায়ী লিজের অধীনে বাংলাদেশি নাগরিকদের নির্বিঘ্ন যাতায়াতের বিধান রয়েছে; নিরাপত্তা ও প্রবেশ–নিয়ন্ত্রণে বিএসএফ কর্তৃত্ব বজায় রাখে—সরকারি নথি ও একাডেমিক বিশ্লেষণে এ কাঠামো উঠে আসে।
আজকের বাস্তবতা: সুবিধা—তবু ‘ফাইন-প্রিন্ট’ আছে
২৪ ঘণ্টা চলাচল শুরুর পরও ‘গেট ম্যানেজমেন্ট’, এক ঘণ্টার দৈনিক ক্লোজার, যানবাহন চলাচলের ধরন, এবং স্থানীয়দের কিছু অভিযোগ—এসব নিয়ে সংবাদে-গবেষণায় আলাপ রয়েছে। নীতিগতভাবে “অবাধ প্রবেশাধিকার” নিশ্চিত হলেও মাঠপর্যায়ে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা-প্রটোকলের কারণে অল্প সময়ের বন্ধ বা নিয়মভিত্তিক তদারকি দেখা যায়। র কেন ‘এভারগ্রিন’ বিষয়?
বিনিময়ের ফলে সীমান্তরেখা সহজ হলেও দহগ্রাম–আঙ্গরপোতা অনন্য ব্যতিক্রম—কারণ এটি এখনো “বাংলাদেশ ভূখণ্ডে যেতে ভারতীয় জমি পার হওয়া”র একমাত্র দৈনন্দিন উদাহরণ। সুতরাং, বাণিজ্য–স্বাস্থ্য–শিক্ষা–দুর্যোগকালীন সহায়তা—সব ক্ষেত্রে এই করিডোরের কার্যকারিতা বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে থাকে।
নীতিপরামর্শ
-
স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রটোকল (SOP) প্রকাশ্য করা—গেট খোলা–বন্ধ, পতাকা আনুষ্ঠানিকতা, অ্যাম্বুলেন্স/জরুরি চলাচলের অগ্রাধিকার—দুই দেশের ওয়েবসাইটে স্পষ্ট ভাষায় ঝুলানো।
-
লজিস্টিক উন্নয়ন—লোডসহ ই–রিকশা/ভ্যানের নিরাপদ চলাচল, জরুরি লেন, সিসিটিভি ও আলো–ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ; স্থানীয় হাসপাতাল–বাজার–স্কুলে দ্রুত অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা।
-
যৌথ মনিটরিং সেল—স্থানীয় প্রশাসন–বিএসএফ–বিজিবি–ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিনিধিদের ত্রৈমাসিক বৈঠক; অভিযোগ–সমাধান পাবলিক ড্যাশবোর্ডে।
-
সাংস্কৃতিক–কমিউনিটি এক্সচেঞ্জ—সীমান্তবাসীর আস্থা গড়ে তুলতে যৌথ স্বাস্থ্য শিবির/ক্রীড়া আয়োজন।