দক্ষিণবঙ্গের ‘অক্সফোর্ড’ খ্যাত সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, সংক্ষেপে বিএম কলেজ, বরিশালসহ অঞ্চলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। ১৩৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রাচীন বিদ্যাপীঠ দেশের জন্য অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী গড়ে তুলেছে। কলেজ থেকে শিক্ষিতরা সমাজ, রাষ্ট্র ও জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, চিকিৎসা, আইন, রাজনীতি, প্রকৌশল ও সাংবাদিকতা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
উজ্জ্বল প্রাক্তন শিক্ষার্থী
বিএম কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মনসুর আলী, প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও আইনজীবী যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত, ভাষাবিদ কাজী আবুল কাশেম, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, জীবনানন্দ দাস, ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্ল বর্মণ, নির্মলেন্দু গুণ, ভাষাসৈনিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়া শিক্ষাবিদ, লেখক ও রাজনীতিকরা যেমন ড. মীজানুর রহমান শেলী, ড. আনিসুজ্জামান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আসাদ চৌধুরী, তোফায়েল আহম্মেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিচারপতি আব্দুর রহমানও এখানে অধ্যয়ন করেছেন।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
ব্রজমোহন কলেজ ১৮৮৪ সালে অশ্বিনী কুমার দত্তের পিতৃবৎ ব্রজমোহন দত্তের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১৭ সালে কলেজটি ৫০ বিঘা জমির বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত হয়, এবং ১৯১৮ সালে সরকারি অর্থে কলেজ ভবন নির্মিত হয়। শুরুতে কলেজটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। শিক্ষার উচ্চ মানের কারণে এটিকে ‘দক্ষিণবঙ্গের অক্সফোর্ড’ বলা হতো।
শিক্ষা কার্যক্রম
ব্রজমোহন কলেজে ১৯৬৪ সালে অর্থনীতিতে অনার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৬৫ সালে কলেজ সরকারিকরণ করা হয়। ১৯৭২ সালে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স এবং কিছু বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে কলেজে ২৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। এখানে আটটি একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি (৯৩,৩৪৭টি বই), ক্যাফে, খেলার মাঠ, দীঘি, মন্দির ও মসজিদ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও সুযোগ-সুবিধা
কলেজে ডিবেটিং ক্লাব, ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, বাঁধন, রোভার ও বিএনসিসি সহ বিভিন্ন কার্যক্রম আছে। চারটি ছাত্রাবাস ও তিনটি ছাত্রী নিবাস শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ ১৯০টির মধ্যে ১৫৬ জন শিক্ষক কর্মরত।
বর্তমান অবস্থা
বিএম কলেজের সাবেক ছাত্রনেতারা বলছেন, কলেজের শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমানে শিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণের কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও, কলেজ এখনো তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুন্নাহার নিপু রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক জিতেছেন।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শেখ মো. তাজুল ইসলাম জানান, এক সময় দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া এই কলেজে এখনো র্যাংকিংয়ে ঐতিহ্য অটুট। লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার মান ও কলেজকে জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ সর্বস্তরে আরও উচ্চশিখরে উন্নীত করা।