
আমেরিকা বাংলা ডেস্ক – ড. মুহাম্মদ ইউনূস, নোবেলজয়ী এই কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বের সম্পদ আর আয় নিয়ে জনমনে কৌতূহলের শেষ নেই! তিনি কতটা সম্পদের মালিক? প্রতিদিন, এমনকি প্রতি ঘণ্টায় কত টাকা আয় করেন? বাংলাদেশের মধ্যমণি হিসেবে তিনি যখন প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁর আয় আর সম্পদের হিসাব নিয়ে চারদিকে চলছে উত্তপ্ত আলোচনা।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, যিনি গরিবের ব্যাংকার হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন, তাঁর সম্পদের গল্প কি সত্যিই রহস্যময়? চলুন, এই কৌতূহলের পর্দা উন্মোচন করি এবং জেনে নিই তাঁর সম্পদ আর আয়ের আসল চিত্র!
ড. ইউনূসের সম্পদ: মিথ না বাস্তবতা?
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিটি ইটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ড. ইউনূসের নাম। জীবনের বড় একটি অংশ ব্যয় করেছেন তিনি এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। কিন্তু অবাক করা তথ্য হচ্ছে, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে তিনি কোনো বেতন, পারিশ্রমিক কিংবা কোনো আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেননি! এমনকি শুধু গ্রামীণ ব্যাংকই নয়, তিনি বিশ্বের কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিকানার অংশীদারও নন।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট করেছেন, “ড. ইউনূস শুধু গ্রামীণ নামটি দিয়েছেন, এর মানে এই নয় যে এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁর। তাঁর কোনো শেয়ার নেই, কোনো সম্পত্তি নেই। যদি কেউ এর বিপরীতে প্রমাণ দিতে পারে, তাহলে দেখাক!”
এমনকি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে একজন আইনজীবীও দাবি করেছিলেন যে ড. ইউনূসের নামে কোনো সম্পদ নেই, এমনকি ব্যক্তিগত গাড়িও নেই! তবে কি তিনি সত্যিই কোনো সম্পদের মালিক নন? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই অবাক হতে পারেন।
গুজব না সত্য?
কিছু অভিযোগে বলা হয়েছিল,মোটা অঙ্কের টাকা। কিন্তু বাস্তবতা কী? ২০০৯ সালে এই সংস্থা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিল। সে সময় ড. ইউনূস সৌদি আরবে ছিলেন।
সেখানে একটি জার্মান-সৌদি হাসপাতাল বাংলাদেশ থেকে দক্ষ নার্স ও হাসপাতাল কর্মী পাঠানোর জন্য ইউনূসের মাধ্যমে অনুরোধ জানায়। কারণ, এতে খরচ কম হতো। কিন্তু তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার এই প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়নি। ফলে এই অভিযোগও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়।
ড. ইউনূসের আয়: প্রতিদিন কত?
এবার আসা যাক ড. ইউনূসের আয়ের হিসাবে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত ১০ মাসে তাঁর অ্যাকাউন্টে এসেছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এই টাকা এসেছে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের জন্য। প্রাইম মিনিস্টার্স বিল ২০১৬ অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মাসিক বেতন ১,১৫,০০০ টাকা।
এছাড়াও তিনি মাসিক বাড়িভাড়া পান ১,০০,০০০ টাকা এবং দৈনিক ভাতা ৩,০০০ টাকা। সব মিলিয়ে তাঁর মোট আয় প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এই হিসাবে, ড. ইউনূসের দৈনিক আয় প্রায় ১০,০০০ টাকা, যা ঘণ্টাপ্রতি প্রায় ৪১৭ টাকা।
এছাড়াও তিনি যাতায়াত খরচ, বাড়িভাড়া, দৈনিক ভাতা, ইনস্যুরেন্স, কূটনৈতিক পাসপোর্ট, অফিস ও টেলিফোন খরচ, চিকিৎসা সেবাসহ নানা সুবিধা পান, যার সব খরচ বহন করে রাষ্ট্র।
তাহলে আয়ের উৎস কী?
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কোনো টাকা না পেলে ড. ইউনূসের আয়ের উৎস কী? সহজভাবে বলতে গেলে, তাঁর প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের বেতন ও সুবিধা। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মাননা, বক্তৃতা, এবং পরামর্শমূলক কাজ থেকে আয় করেন। তবে এই আয়ের পরিমাণ সরকারি হিসাবের বাইরে থাকায় সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না।
ড. ইউনূসের জীবনধারা: সাদাসিধে না রহস্যময়?
ড. ইউনূসের জীবনধারা নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে। তিনি কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি বা বিলাসবহুল সম্পদের মালিক নন বলে দাবি করা হয়। তাঁর জীবনযাপন সাধারণ, এবং তিনি নিজেকে সবসময় গরিবের পাশে দাঁড়ানো একজন সমাজসেবী হিসেবে উপস্থাপন করেন।
তবে তাঁর এই সাধারণ জীবনযাপন নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশাল প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক সংযোগ তাঁর আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু এই দাবিগুলোর পক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
নোবেল পুরস্কারের টাকা কোথায়?
২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন ড. ইউনূস। এই পুরস্কারের সঙ্গে প্রায় ১০ লাখ মার্কিন ডলারের আর্থিক পুরস্কার ছিল। কিন্তু সেই টাকার কী হলো? জানা যায়, ড. ইউনূস এই অর্থ দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি নিজের জন্য এই অর্থের কোনো অংশ ব্যবহার করেননি বলে দাবি করা হয়। এই বিষয়টিও তাঁর সম্পদ নিয়ে কৌতূহলকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
শেষ কথা
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্পদ আর আয় নিয়ে আলোচনা যতটা রহস্যময় মনে হলেও, তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দেখা যায় তিনি ব্যক্তিগত সম্পদের দিক থেকে অনেকটাই সাধারণ। তাঁর আয়ের মূল উৎস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব এবং আন্তর্জাতিক কার্যক্রম।
তবে তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশাল প্রভাব এবং তাঁর জীবনধারা নিয়ে জনমনে কৌতূহল থেকেই যায়। আপনার কী মনে হয়? ড. ইউনূসের এই সাধারণ জীবনধারা কি সত্যিই তাঁর বাস্তবতা, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে
আছে আরও কোনো গল্প? আপনার মতামত শেয়ার করুন!