নামেনি বিএনপি, ‘ফাঁকা মাঠে’ তৎপর জামায়াত

আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে তিন মাসের মধ্যে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। যদিও ভোট এখনো কিছুটা দেরিতে, রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছে। রাজনীতির মাঠেও ধীরে ধীরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়েও নেতারা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন।

জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে দেশের সব সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। মূল সংগঠনের পাশাপাশি ছাত্র, নারী ও সহযোগী সংগঠনগুলোকেও মাঠে নামিয়েছে দলটি। স্থানীয় পর্যায়ে তারা প্রচার, যোগাযোগ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। অন্যদিকে, বিএনপিও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবে দলীয় নেতাকর্মীরা স্বীকার করছেন—এখনও মাঠ পর্যায়ে সেই প্রস্তুতি পুরোপুরি শুরু হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যেই আছে, প্রত্যেক নেতাকর্মী নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন।” তবে দলের দায়িত্বশীল কিছু নেতা জানিয়েছেন, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ে এখনো তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডও সীমিত সভা-সেমিনারেই সীমাবদ্ধ।

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, “বড় দল হিসেবে প্রতিটি আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকায় বাছাইয়ে কিছুটা সময় লাগছে, তবে খুব দ্রুতই প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।”

দলের অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন, জামায়াতে ইসলামী যেভাবে আগেভাগে তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছে, তাতে বিএনপি পিছিয়ে পড়ছে। এর প্রভাব আসন্ন নির্বাচনে পড়তে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুও স্বীকার করেছেন, নির্বাচনী প্রস্তুতিতে জামায়াত বিএনপির চেয়ে এগিয়ে আছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জাতীয় নির্বাচন। কে প্রার্থী হচ্ছেন, কোন দল কাকে মনোনয়ন দেবে, কার জয়ের সম্ভাবনা বেশি—এসব নিয়ে আলোচনা-তর্ক চলছে সর্বত্র।

বিএনপির নেতারা বলছেন, তরুণ ও প্রথমবারের ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এখনো কোনো কার্যকর কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। তারা আশঙ্কা করছেন, পরিকল্পনা ও মাঠ জরিপ ছাড়া নির্বাচনে গেলে আগের মতো বিপর্যয় ঘটতে পারে।

একই সঙ্গে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগির সিদ্ধান্তও এখনো হয়নি। বিভিন্ন আসনে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় দলীয় বিভক্তি ও কোন্দল বাড়ছে, যা নির্বাচনী ফলাফল প্রভাবিত করতে পারে।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী গত বছর থেকেই প্রার্থিতা ঘোষণা করে ছাত্রশিবির ও নারী কর্মীদের মাঠে নামিয়েছে। তারা প্রচার চালাচ্ছেন, ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের দোহাই দিয়ে সমর্থন চাইছেন। দলটি সম্প্রতি পাঁচ দফা দাবিতে ১২ দিনের গণসংযোগ কর্মসূচিও পালন করেছে, যা নির্বাচনের আগে মাঠ দখলের কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “অধিকার কেউ দেয় না, আদায় করে নিতে হয়। নির্বাচনে আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

অপরদিকে, বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলোর কার্যক্রম প্রায় স্থবির। ছাত্রদল, যুবদল ও মহিলা দল—যারা অতীতে নির্বাচনী প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল, এবারও তারা মাঠে সক্রিয় হতে পারেনি। ছাত্রদল এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত, যুবদলের নেতৃত্ব কাঠামো অসম্পূর্ণ, আর মহিলা দল নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় সীমিত।

তবে নারী ভোটারদের প্রভাবিত করতে বিএনপি “নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম”কে মাঠে নামানোর পরিকল্পনা করছে। খুলনা বিভাগ থেকে ১৪ অক্টোবর এ কার্যক্রম শুরু হবে। যদিও দলের ভেতরেই অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এই ফোরাম জামায়াতের নারী সংগঠনের মতো কার্যকর হবে কি না, কারণ এটি এখনো তৃণমূল পর্যায়ে সক্রিয় নয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, “আগামী নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হবে। যে দল যত বেশি পরিকল্পিতভাবে মাঠে নামবে, জনগণের আস্থা অর্জন করবে, তার ফল তত ভালো হবে। তবে প্রতিযোগিতা যাই থাকুক, জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ঐক্য অটুট রাখা সবার দায়িত্ব।”

সূত্র: সমকাল

আরও দেখুন

বিসিবির নির্বাচনে বাধা নেই, ১৫ ক্লাব পারবে অংশ নিতে

বিসিবি নির্বাচনে জেলা ও বিভাগের অ্যাডহক কমিটি থেকে কাউন্সিলর চেয়ে বি‌সি‌বি সভাপ‌তি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *