পুতিনের কৌশলে কোণঠাসা ট্রাম্প, ইউক্রেন নিয়ে ধোঁয়াশা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে বরাবরই ‘কঠিন দরদাতা’ হিসেবে উপস্থাপন করে আসছেন। কিন্তু গত শুক্রবার আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বহুল আকাঙ্ক্ষিত বৈঠকে তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বৈঠকের আগে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, পুতিন তাকে অত্যন্ত সম্মান করেন এবং তাই তিনি (পুতিন) ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান চাওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক। কিন্তু বাস্তবে সেই ধারণা অযৌক্তিক বলেই প্রমাণিত হয়েছে।

পুতিনের কৌশলে কোণঠাসা ট্রাম্প, ইউক্রেন নিয়ে ধোঁয়াশা
পুতিনের কৌশলে কোণঠাসা ট্রাম্প, ইউক্রেন নিয়ে ধোঁয়াশা

অনমনীয় পুতিন

পুতিন তার দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে এক ইঞ্চিও সরে আসেননি। তিনি এখনও ইউক্রেনের চারটি প্রদেশ—দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসনের ওপর রাশিয়ার দাবি বজায় রেখেছেন। রাশিয়া এখন পর্যন্ত শুধু লুহানস্ক প্রদেশ প্রায় সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিতে পেরেছে। তবুও পুতিন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, কারণ তিনি ভূখণ্ড দখল ছাড়তে রাজি নন।

ট্রাম্প বৈঠকের আগে একাধিক বক্তব্যে বলেন, রাশিয়ার অর্থনীতি ‘ধ্বংসের মুখে’ এবং তেলের দামের পতন দেশটির যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষমতা দুর্বল করে দিচ্ছে। সত্যিই রাশিয়া বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধি, শ্রম ঘাটতি ও বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়াসহ অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে। শুধু তেল বিক্রি থেকে আয়ই এ বছর ১৮% কমে গেছে। এমনকি মন্দার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু এসব সংকটও পুতিনকে পিছু হটাতে পারেনি।

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান

ট্রাম্প বৈঠকের আগেই ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তাৎক্ষণিকভাবে তা মেনে নিলেও পুতিন প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন। তার যুক্তি, কেবল যুদ্ধবিরতিতে কোনো সমাধান আসবে না, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তি চুক্তি প্রয়োজন, যেখানে সংঘাতের ‘মূল কারণ’গুলো সমাধান করতে হবে।

বৈঠকের আগ মুহূর্তে ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কড়া

দেন এবং বলেন, ‘গুরুতর পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। কিন্তু বৈঠকে পুতিন এ হুমকি একেবারেই গুরুত্ব দেননি।

অগোছালো বৈঠক

আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সফল সম্মেলনের জন্য মাসব্যাপী পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক হুট করেই আয়োজন করা হয়। ফলে বৈঠক স্বল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প দাবি করেন, আলোচনায় ‘অনেক বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে’। তবে তিনি কোনো একটি বিষয়ও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে পারেননি। ওই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নও করতে দেওয়া হয়নি।

পুতিনের ফাঁদ

বৈঠকে পুতিন কিছুটা নমনীয়তার ভান দেখান। তিনি প্রস্তাব দেন, যদি ইউক্রেন দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে রাজি। এর মানে পুরো দনবাস অঞ্চল (পূর্ব ইউক্রেন) কার্যত রাশিয়ার হাতে চলে যাবে। ৪০ মাস ধরে যুদ্ধ চালিয়েও যেখানে মস্কো পুরো অঞ্চল দখল করতে পারেনি, সেখানে আলোচনার নামে সহজেই তা লাভ করার কৌশল সাজালেন পুতিন।

বিশ্লেষকদের মতে, এটি আসলে এক ধরনের কূটনৈতিক ফাঁদ। কারণ যদি জেলেনস্কি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, তবে পুতিন ট্রাম্পকে চাপ প্রয়োগে উৎসাহিত করবেন এবং ইউরোপকে বিব্রত পরিস্থিতিতে ফেলবেন। ব্যর্থ হলে জেলেনস্কিকেই শান্তির পথে প্রধান অন্তরায় হিসেবে তুলে ধরা সম্ভব হবে।

ইউরোপে অবিশ্বাসের বীজ

ট্রাম্প বৈঠকের আগে ঘোষণা করেছিলেন, ব্যর্থ হলে আর কোনো বৈঠক হবে না। কিন্তু ব্যর্থ বৈঠকের পরও তিনি নতুন বৈঠকের আশ্বাস দেন। পুতিনও তাৎক্ষণিকভাবে মস্কোকে সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে প্রস্তাব দেন। তবে ইউক্রেন বা ইউরোপীয় নেতাদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি। এতে ইউরোপের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের ফাঁক আরও বেড়েছে।

ইতোমধ্যে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যে, ট্রাম্প–পুতিন বৈঠকে ইউক্রেনকে ভাগ করে দেওয়ার মতো কোনো সমঝোতা হয়নি। কিন্তু ট্রাম্প যে জেলেনস্কিকে বাদ দিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রাজি হয়েছেন, সেটিই ইউরোপের মধ্যে অবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও দেখুন

জোহরান মামদানি

বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটিতে জোহরান মামদানির জনপ্রিয়তা: নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক জাগরণ!

America Bangla Report | নিউইয়র্ক, অক্টোবর ২০২৫ নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন Zohran Mamdani …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *