বাংলাদেশীদের সম্মান জানিয়ে নিউ ইয়র্কে বিশেষ দিন ঘোষণা!

বাংলাদেশী সম্মানে বিশেষ দি ঘোষণা নিউ ইয়র্ক সিটির
বাংলাদেশী সম্মানে বিশেষ দি ঘোষণা নিউ ইয়র্ক সিটির

আমেরিকা বাংলা ডেস্ক : আমেরিকার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে, যেখানে স্বপ্নের আকাশ ছুঁয়ে যায়, সেখানে বাংলাদেশী প্রবাসীদের কাহিনি এক অপূর্ব আলোর মালা। ২০২৫ সালে, এই প্রবাসীরা তাদের মাতৃভূমির ঐতিহ্যকে জীবন্ত রেখে, আমেরিকান সমাজে এক অমোঘ ছাপ রেখেছেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের ‘লিটল বাংলাদেশ’ থেকে নিউ ইয়র্কের ‘বাংলাদেশী ইমিগ্রান্ট ডে’—এই স্বীকৃতিগুলো শুধু গর্বের নয়, বরং প্রবাসীদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির প্রতীক। আমেরিকাবাংলা.কম-এর এই প্রতিবেদনে আমরা এই গৌরবময় যাত্রার কিছু ঝলক তুলে ধরব, যা প্রবাসী ভাই-বোনদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

লস অ্যাঞ্জেলেসের থার্ড স্ট্রিটে, নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে অ্যালেক্সান্ড্রিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত বিস্তৃত ‘লিটল বাংলাদেশ’ ২০১০ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি কাউন্সিল কর্তৃক আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করে। তৎকালীন মেয়র অ্যান্টোনিও ভিলারাইগোসা এটিকে বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বর্ণনা করেন। নীল রঙের সড়ক চিহ্নে লেখা ‘লিটল বাংলাদেশ’ এখন ১০,০০০-এরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশীর হৃদয়ের আশ্রয়। এখানে বাংলা ভাষার দোকানের সাইনবোর্ড, সামোসা, পুরি, পেঁয়াজু, কাবাব, বিরিয়ানি এবং রসগোল্লা, সন্দেশ, লাল মোহনের মিষ্টি ঘ্রাণ—সব মিলিয়ে যেন এক খণ্ড বাংলাদেশ। প্রবাসীরা এখানে চা খেতে, খাবার খেতে, গল্প করতে, বাংলাদেশের খবর দেখতে জড়ো হন। দীর্ঘদিনের অভিবাসী শরীফ হাসান বলেন, “এখানে এলে মনে হয় ঘরে ফিরেছি।” দোকানকর্মী তারেক হাসিবের কথায়, বিভিন্ন পেশার মানুষ এখানে গল্প ভাগ করে, রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করে। বাংলাদেশ ইউনিটি ফেডারেশন অব লস অ্যাঞ্জেলেসের অঞ্জুমান আরা শিউলি এটিকে “আমাদের সম্প্রদায়ের হৃদয়” বলে অভিহিত করেন।

এই এলাকায় সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় কার্যক্রমের ছড়াছড়ি। বাংলাদেশ ইউনিটি ফেডারেশন, উত্তরণ কালচারাল গ্রুপ, তরঙ্গ অব ক্যালিফর্নিয়া, মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা—এসব সংগঠন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদের জমায়েত, চাঁদ রাত মেলা, বাংলাদেশ মেলা, আনন্দ মেলা, লোকসংগীত উৎসব, নজরুল উৎসব, লালন উৎসব, বৈশাখী মেলা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করে। মসজিদ এবং ইসলামিক সেন্টারগুলো ১৯৬০-এর দশক থেকে প্রতিষ্ঠিত, যেখানে নামাজ, বক্তৃতা, আবাসন, চাকরি এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সহায়তা দেওয়া হয়। আব্দুল মান্নান বলেন, “আমাদের অগ্রাধিকার সম্প্রদায়ের সেবা।” ক্যালিফর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, নর্থরিজের সমর্থনে বাংলাদেশী সাহিত্য এবং সংগীত প্রচার হয়, যেমন কাজী নজরুল ইসলামের কাজ। বাংলাদেশ সরকার, বাংলা একাডেমি এবং নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রশংসা পেয়েছে এই উদ্যোগ। উত্তরণ কালচারাল গ্রুপের মুর্শেদুল ইসলাম এটিকে “একটি ক্ষুদ্র বাংলাদেশ” বলে বর্ণনা করেন, যা শিশুদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে যুক্ত করে।

এদিকে, নিউ ইয়র্কে ২০২৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরকে ‘বাংলাদেশী ইমিগ্রান্ট ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেছে নিউ ইয়র্ক স্টেট সেনেট। এই রেজোলিউশন (জে২৩১) গভর্নর ক্যাথি হোচুলকে স্মরণ করিয়ে দেয় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের স্বীকৃতির গুরুত্ব। এটি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব, ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম বাংলা ভাষায় ভাষণ এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি স্মরণ করে। নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটস, কুইন্সে সবচেয়ে বড় বাংলাদেশী সম্প্রদায়, যেখানে ২৫০,০০০-এরও বেশি বাংলাদেশী জন্মসূত্রে অভিবাসী। ২০১৮ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে ৮০,০০০-এরও বেশি বাঙালি ছিলেন, এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০,০০০-এরও বেশি অ-নিবাসী বাংলাদেশী। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালি থেকে আসা এই প্রবাসীরা কনস্যুলেট জেনারেল অব বাংলাদেশের সহায়তায় সেবা পান। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ২০ বছর ধরে বাংলা উৎসব এবং বইমেলা আয়োজন করে সংস্কৃতি প্রচার করে।

এই স্বীকৃতিগুলো প্রবাসীদের জন্য অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা রেকর্ড ১৭,০৯৯-এ পৌঁছেছে, যা ২৬% বৃদ্ধি। এটি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের ৮ম স্থানে নিয়ে গেছে। প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছেন, এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশী দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এই অর্জনগুলো প্রবাসীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং সমাজে তাদের অবদানকে মূল্যায়ন করে।

প্রবাসী ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে বলা যায়, এই গৌরব শুধু অতীতের নয়, ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক। লিটল বাংলাদেশ এবং ইমিগ্রান্ট ডের মতো স্বীকৃতি প্রমাণ করে, অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সাংস্কৃতিক দৃঢ়তা দিয়ে বিদেশের মাটিতেও ঘর তৈরি করা যায়। ২০২৫ সালে এই অর্জন উদযাপন করে, আসুন আমরা সকলে মিলে বাংলাদেশের আলো বিশ্বে ছড়িয়ে দিই। এটি শুধু একটি খবর নয়, বরং প্রবাসীদের অমর কাহিনির অংশ।

আরও দেখুন

জোহরান মামদানি

বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটিতে জোহরান মামদানির জনপ্রিয়তা: নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক জাগরণ!

America Bangla Report | নিউইয়র্ক, অক্টোবর ২০২৫ নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন Zohran Mamdani …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *