বিশ্ব কি ট্রাম্পের এই ভুল ও বিপজ্জনক বক্তব্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, নাকি চুপ থাকবে?

ট্রাম্প
ট্রাম্প

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বৈশ্বিক অভিবাসন এজেন্ডার বিরোধিতা করেন। ট্রাম্প দেশগুলোকে বলেন সীমান্ত বন্ধ করতে, বিদেশিদের বের করে দিতে এবং যেসব অভিবাসীর সঙ্গে “আপনাদের কোনো সম্পর্ক নেই, কোনো মিলও নেই” তাদের ঠেকাতে। তিনি অভিবাসনকে দেশগুলোর জন্য অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে তুলে ধরেন।

এমন বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক নাটক নয়; এর প্রতীকী গুরুত্বও আছে। এর মানে দাঁড়ায়—বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো অনেক সময় অভিবাসী বা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক পদক্ষেপকে সরাসরি সমর্থন না করলেও চুপচাপ মেনে নিতে পারে।

মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ

মিয়ানমারের সামরিক সরকার বহু বছর ধরে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে রেখেছে। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের স্বীকৃত জাতিগোষ্ঠী নয়। তাদের “বাংলাদেশ থেকে আসা বাঙালি” বলা হয়, যদিও তারা শত শত বছর ধরে রাখাইন অঞ্চলে বসবাস করছে।

এভাবে আইনগত বঞ্চনা পরে রূপ নেয় সহিংসতায়। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনারা রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালায়। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়, নারী ও শিশুদের ওপর ভয়াবহ যৌন সহিংসতা হয় এবং গ্রামগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারসহ অনেক সংস্থা এ ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু এখনও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে আটকে আছে; তাদের কোনো ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা বা নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ নেই।

ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রভাব

ট্রাম্প যখন জাতিসংঘের মতো মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিদেশিদের তাড়ানোর কথা বলেন, তখন মিয়ানমারের সামরিক সরকার সেটাকে নিজেদের বৈধতা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এর মাধ্যমে তারা মনে করতে পারে—বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশও এমন নীতিকে সমর্থন করছে।

ফলে রোহিঙ্গা নিপীড়ন শুধু চলমানই থাকবে না, বরং তা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ট্রাম্পের বক্তব্য নিপীড়ক শক্তিগুলিকে সাহস জোগায়, আর মানবাধিকার রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কাজকে দুর্বল করে।

বিশ্ব রাজনীতির ঝুঁকি

ট্রাম্পের ভাষণ শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য নয়, বিশ্বের অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্যও ভয়াবহ বার্তা বহন করে। এতে বোঝানো হয় যে, রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে কোনো জাতিগোষ্ঠীকে বিতাড়ন এখন রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে যেতে পারে। অর্থনৈতিক বা নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় থাকা দেশগুলো সহজেই প্রবাসী বা সংখ্যালঘুদের দোষারোপ করতে পারে।

অর্থাৎ, ট্রাম্পের এই বক্তব্য বিশ্বে এক ধরনের বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে—যেখানে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে তাড়ানোকে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার অজুহাত হিসেবে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে।

ট্রাম্পের জাতিসংঘ ভাষণ শুধুই একটি বক্তব্য ছিল না, বরং এটি বিশ্ব রাজনীতিতে একটি বড় সতর্কবার্তা। রোহিঙ্গাদের মতো নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের জন্য এটি প্রাণঘাতী প্রভাব ফেলতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো—বিশ্ব কি এই ভুল ও বিপজ্জনক বক্তব্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, নাকি চুপ থেকে নির্যাতিত মানুষদের আরও বিপদের দিকে ঠেলে দেবে?

আরও দেখুন

‘টার্গেট তেহরান’: ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানে মানবিক বিপর্যয়

‘টার্গেট তেহরান’: ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানে মানবিক বিপর্যয়

মুহাম্মদ সোহেল রানাঃ মার্কিন অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান Fault Lines তাদের নতুন পর্ব ‘Target Tehran’-এ ইরানে ইসরায়েল …