
আমেরিকা বাংলা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে দিনের বেলায় সরকারি চাকরি, আর রাতে আরেকটা অফিসের কাজ – শুনতে সিনেমার গল্প মনে হচ্ছে, তাই না? কিন্তু এটাই করেছেন এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ, যার নাম মেহুল গোস্বামী। বয়স ৩৯ বছর। নিউইয়র্ক রাজ্যের ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভিসেস বিভাগে ছিলেন তিনি। ভালো বেতন, সম্মানজনক চাকরি – সবই ছিল ঠিকঠাক। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, গোপনে তিনি আরেকটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন চাকরি করতেন!
অর্থাৎ দিনে সরকারি কাজ, রাতে অন্য অফিসে। দুই দিকেই ফুলটাইম! প্রথমে কেউ বুঝতেই পারেনি। কাজও মোটামুটি চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সরকারী অফিসের রেকর্ড আর টাইম লগ যখন মিলানো হলো, তখন বেরিয়ে আসে অবাক করা তথ্য – অফিসের সময়েই তিনি অন্য প্রতিষ্ঠানের কাজ করছেন! মানে সরকারি বেতন নিচ্ছেন, অথচ সরকারি কাজ করছেন না।
এভাবেই ধীরে ধীরে ফাঁস হয় মেহুলের গোপন খেলাটা। তদন্তে জানা যায়, এই দ্বৈত চাকরির মাধ্যমে তিনি রাজ্যের ট্যাক্সপেয়ারদের টাকায় ৫০ হাজার ডলারেরও বেশি আত্মসাৎ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে এটা কোনো সাধারণ অপরাধ নয়। রাজ্যের আইন অনুযায়ী, এই ধরনের কাজ “গ্র্যান্ড লারসেনি ইন দ্য সেকেন্ড ডিগ্রি” হিসেবে গণ্য হয়, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৫ বছরের কারাদণ্ড।
ভাবুন তো, অফিসে বসে অন্য অফিসের কাজ করছেন, অথচ দুই দিক থেকেই বেতন পাচ্ছেন! কিন্তু ধরা পড়তেই সব উলটে গেল। নিউইয়র্ক পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে, আর এখন তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগও গঠন করা হয়েছে। আদালতের রায়ে দোষী প্রমাণিত হলে, তাঁর ভাগ্যে জেল তো আছেই, সঙ্গে দিতে হতে পারে বড় অঙ্কের জরিমানাও।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মেহুল নিয়মিতভাবে সরকারি কাজের সময়েই অন্য প্রতিষ্ঠানের কাজ করতেন। অনেক সময় ভিডিও কল, মিটিং কিংবা কোডিংয়ের সময়ও দুটো ল্যাপটপ একসঙ্গে চালাতেন! মনে করতেন কেউ বুঝবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি দপ্তরের নজরদারি এতটাই শক্ত যে, একবার সন্দেহ হলেই সব ডেটা খুঁটিয়ে দেখা হয়। আর সেখানেই ধরা পড়ে যায় তাঁর কারসাজি।
যুক্তরাষ্ট্রে “moonlighting” নামের এই প্রবণতা বেশ আলোচিত একটি বিষয়। মানে হচ্ছে, নিজের মূল চাকরির পাশাপাশি লুকিয়ে আরেকটি চাকরি করা। অনেকেই এটা করেন বাড়তি আয়ের আশায়, কিন্তু সরকারি দপ্তরে এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ এতে একদিকে সরকারি সময় ও সম্পদ অপচয় হয়, অন্যদিকে এটা সরাসরি প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের আওতায় পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি খাতে যারা কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে এমন প্রলোভন বেশি দেখা যায়। কারণ বেশিরভাগ কাজই অনলাইনে হয়, ফলে অন্য অফিসের কাজ করা অনেক সময় সহজ মনে হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে অফিস সময় বা সরকারি কাজের নিয়ম ভাঙলে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
মেহুল গোস্বামীর ঘটনাটা এখন অনেকের জন্যই এক রকম সতর্কবার্তা। একটা চাকরি রেখে গোপনে আরেকটা করা, সেটি যতই লাভজনক মনে হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত তা নিজের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
কথায় আছে, “চুরি যতই ছোট হোক, ধরা পড়লে তার মূল্য বড়।” মেহুলও হয়তো ভাবেননি, সামান্য কিছু বাড়তি ডলারের আশায় তাঁর জীবন এভাবে উলটে যাবে। এখন তাঁর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আদালতের রায়ের ওপর।
অর্থাৎ, অফিস ফাঁকি দিয়ে দ্বিতীয় ইনকামের সেই লোভ তাঁকে নিয়ে গেছে এমন এক পথে, যেখান থেকে
ফিরে আসা সহজ নয়।
আমেরিকা বাংলা | আমেরিকার বাংলা খবর, কমিউনিটি ও বিশ্ব সংবাদ আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সর্বশেষ বাংলা খবর, কমিউনিটি সংবাদ ও বিশ্ব আপডেট।