
আমেরিকা বাংলা ডেস্ক: পাঞ্জাবের এক গ্রামীণ পরিবারের ৩৯ বছরের গুরপ্রীত সিং-এর জীবন যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো শেষ হয়েছে। বেকারত্বের জ্বালায় দেশ ছেড়ে ‘ডাঙ্কি রুট’-এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েন, এবং এখন চেইন পরা অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির শিকার হয়ে ভারতে ফিরে এসেছেন। এই ফিরে আসা কোনো মুক্তি নয়—বরং ৪০ লক্ষ টাকার ঋণের পাহাড়, পরিবারের কান্না এবং আজীবন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধের ভয়ঙ্কর শাস্তি। গুরপ্রীতের গল্প শুধু তাঁর নয়, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট হওয়া হাজারো ভারতীয় যুবকের সেই কঠিন বাস্তবতার প্রতিফলন, যারা অবৈধ পথে সোনার স্বপ্ন দেখতে গিয়ে হারিয়ে যান।
গুরপ্রীত সিং-এর যাত্রা শুরু হয় ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট। পাঞ্জাবের অমৃতসরের কাছে এক গ্রাম থেকে উঠে এসে তিনি ভারত ছেড়ে গিয়ানায় উড়ে যান, যেখান থেকে শুরু হয় সেই বিপজ্জনক ‘ডাঙ্কি রুট’—মেক্সিকোর সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ প্রবেশের পথ। স্মাগলারদের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কেনা এই ‘স্বপ্নের টিকিট’ আসলে ছিল একটা ফাঁদ। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তিনি ধরা পড়েন টেক্সাসের সীমান্তে। প্রথমে আশ্রয় চেয়ে আদালতে যান, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অভিবাসন নীতির অধীনে তাঁর আবেদন খারিজ। ফলে শুরু হয় অপেক্ষার দিন—যা শেষ হয় ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক মিলিটারি প্লেনে চেইন পরা অবস্থায় ডিপোর্টেশনের মাধ্যমে।
“যখন চেইন পরা অবস্থায় প্লেনে তুলল, মনে হলো পৃথিবী পা টেনে নিচ্ছে,” গুরপ্রীত BBC-কে বলেছেন। “হাত-পা বাঁধা, মুখ মাস্কে ঢাকা—এমনকি মহিলা ও শিশুরাও একই অবস্থায়। ৪০ ঘণ্টার যাত্রা, শুধু বিস্কুট আর রুটি খেয়ে।” এই ঘটনা ঘটে ৫ ফেব্রুয়ারি, যখন একটি ইউএস মিলিটারি প্লেনে ১০৪ জন ভারতীয়কে অমৃতসরে নামানো হয়—ট্রাম্পের প্রথম বড় ডিপোর্টেশন ফ্লাইট। গুরপ্রীতের মতো অনেকেই অবৈধ প্রবেশের পর অপরাধে জড়াননি, কিন্তু আইন লঙ্ঘনের জন্য পেলেন সবচেয়ে কঠোর শাস্তি: স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত, আজীবন ভিসা নিষিদ্ধ এবং ভবিষ্যতে কোনোদিন ফিরে না আসার ভয়। এছাড়া, পরিবারের উপর পড়ে ঋণের চাপ, যা স্মাগলারদের কাছে খরচ করা হয়েছে।
এই ডিপোর্টেশন শুধু গুরপ্রীতের নয়। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২,৪১৭ ভারতীয় নাগরিককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে—প্রতিদিন গড়ে আটজন। এর মধ্যে পাঞ্জাব (৩৮%), হরিয়ানা (৩৩%) এবং গুজরাত (২২%) থেকে সবচেয়ে বেশি, যেখানে অর্থনৈতিক সংকট যুবকদের এই অবৈধ অভিবাসনে ঠেলে দেয়। ইউরোপেও পরিস্থিতি একই: যুক্তরাজ্য থেকে ১৩১ জন ভারতীয়কে ২০২৫-এ ডিপোর্ট করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমইএ) এই ঘটনায় সতর্কবাণী জারি করেছে: “অবৈধ অভিবাসনের সঙ্গে যুক্ত অপরাধের শাস্তি অমানবিক হতে পারে। আমরা আইনি পথের প্রচার করছি।”
গুরপ্রীতের পরিবার এখন ঋণের লড়াই করছেন। “স্বপ্ন ছিল নতুন জীবনের, কিন্তু ফিরে এলাম শিকলের স্মৃতিতে,” তাঁর ভাই বলছেন। এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, অবৈধ পথের শেষে কী অপেক্ষা করে। গুরপ্রীত সিং-এর মতো হাজারো যুবকের জন্য এটা একটা সতর্কবার্তা: স্বপ্ন দেখুন, কিন্তু আইনের সীমায়। নাহলে শাস্তির ছায়া পড়বে সারা জীবন।
আমেরিকা বাংলা | আমেরিকার বাংলা খবর, কমিউনিটি ও বিশ্ব সংবাদ আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সর্বশেষ বাংলা খবর, কমিউনিটি সংবাদ ও বিশ্ব আপডেট।