
আমেরিকা বাংলা ডেস্ক: আমেরিকার উঁচু আকাশচুম্বী ভবনের ছায়ায়, যেখানে বাংলাদেশী প্রবাসীরা দিনরাত পরিশ্রম করে স্বপ্নের বীজ বুনে যান, সেখান থেকে একটি সোনালি স্রোত বয়ে চলেছে মাতৃভূমির দিকে। ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছাড়িয়েছে **২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার**—যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় **৩৮ শতাংশ** বেশি। এই অর্থ শুধু সংখ্যা নয়, বরং লক্ষ লক্ষ পরিবারের স্বপ্ন, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং উন্নয়নের জীবনরেখা। আমেরিকাবাংলা.কম-এর এই প্রতিবেদনে আমরা এই অর্থনৈতিক বিপ্লবের উজ্জ্বল গল্প তুলে ধরব—যা প্রবাসী বাংলাদেশীদের গর্ব এবং অনুপ্রেরণার উৎস।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে **২৫০ কোটি ৪০ লাখ ডলার**। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসেই এসেছে **৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলার**—যা একক মাসের হিসেবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই বৃদ্ধির পিছনে রয়েছে তিনটি মূল কারণ:
– **উচ্চ আয়ের পেশায় প্রবাসীদের উত্থান** (আইটি, চিকিৎসা, ইঞ্জিনিয়ারিং)
– **ডিজিটাল ব্যাংকিং ও মোবাইল অ্যাপের বিস্তার** (বিকাশ, নগদ, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন)
– **প্রবাসীদের মধ্যে দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার নতুন জাগরণ**
নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, ক্যালিফর্নিয়া, টেক্সাস—এই রাজ্যগুলো থেকেই আসছে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স। বিশেষ করে **নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস** এবং **লস অ্যাঞ্জেলেসের লিটল বাংলাদেশ** এলাকা এখন ‘রেমিট্যান্স হাব’ হিসেবে পরিচিত। এখানকার বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইটি পেশাজীবী—সবাই মিলে প্রতি মাসে গড়ে **৮০০-১০০০ ডলার** করে পাঠাচ্ছেন। একজন আইটি প্রকৌশলী, মোহাম্মদ রহমান (নাম পরিবর্তিত), বলেন, “আমি মাসে ১২০০ ডলার পাঠাই। এটা আমার মায়ের চিকিৎসা, ভাইয়ের পড়াশোনা আর গ্রামের বাড়ির জন্য। এটা আমার দায়িত্ব, আমার ভালোবাসা।”
এই রেমিট্যান্সের প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অপরিসীম।
– **জিডিপির ৬.৫%** এখন রেমিট্যান্স থেকে আসছে।
– **বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ** ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে—যার বড় অংশ প্রবাসীদের অবদান।
– **গ্রামীণ অর্থনীতি** জুড়ে নতুন বাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল গড়ে উঠছে।
বাংলাদেশ সরকারও প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। **২.৫% প্রণোদনা** ছাড়াও এখন **‘প্রবাসী বন্ড’** চালু হয়েছে, যেখানে ৭-৮% সুদে ডলারে বিনিয়োগ করা যায়। ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, **‘প্রবাসী সেবা ডেস্ক’** চালু হয়েছে, যেখানে রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ, পাসপোর্ট নবায়ন—সব সেবা এক ছাদের নিচে। এছাড়া, **‘প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক’** থেকে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ ঋণ স্কিম চালু হয়েছে, যাতে বিনিয়োগ করে দেশে ব্যবসা শুরু করা যায়।
প্রবাসীদের জন্য আরেকটি সুখবর—**ডিজিটাল রেমিট্যান্স** এখন আরও সহজ। বিকাশ, নগদ, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, রিয়া মানি—এসব অ্যাপে ৫ মিনিটে টাকা পৌঁছে যাচ্ছে। ফি কমেছে, নিরাপত্তা বেড়েছে। এমনকি **‘ডলার অ্যাকাউন্ট’** খোলার সুবিধা চালু হয়েছে, যাতে প্রবাসীরা ডলারে সঞ্চয় করতে পারেন।
এই অর্থনৈতিক বিপ্লব শুধু অর্থের নয়, ভালোবাসার। একজন প্রবাসী মা, নাসরিন আক্তার, বলেন, “আমি আমেরিকায় কাজ করি, কিন্তু আমার হৃদয় বাংলাদেশে। প্রতি মাসে ৭০০ ডলার পাঠাই—এটা আমার সন্তানের স্কুল ফি, বাবার ওষুধ। এটা আমার জীবনের অর্থ।” এই গল্প প্রতিটি প্রবাসী পরিবারের।
প্রবাসী ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে বলা যায়—আপনারা বাংলাদেশের প্রকৃত হিরো। আপনার পরিশ্রম, আপনার ভালোবাসা, আপনার দায়বদ্ধতা—এই সব মিলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। **২.৫ বিলিয়ন ডলার** শুধু অর্থ নয়, এটা আপনার স্বপ্নের বিনিয়োগ, আপনার পরিবারের ভবিষ্যৎ। আসুন, এই গৌরবকে আরও বাড়াই। আরও বেশি পাঠান, আরও বেশি বিনিয়োগ করুন, আরও বেশি গর্ব করুন। কারণ আপনারা শুধু প্রবাসী নন—আপনারা বাংলাদেশের অর্থনীতির **সোনার স্তম্ভ**।
আমেরিকা বাংলা | আমেরিকার বাংলা খবর, কমিউনিটি ও বিশ্ব সংবাদ আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সর্বশেষ বাংলা খবর, কমিউনিটি সংবাদ ও বিশ্ব আপডেট।