“রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের পথ চ্যালেঞ্জ”

“রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের পথ চ্যালেঞ্জ”
“রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের পথ চ্যালেঞ্জ”

২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে প্রায় সবকটি অবস্থা বদলে গেছে। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর সহিংস অভিযানের পর প্রায় ৭৫০,০০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। গত আট বছর ধরে এ সমস্যা শুধু মানবিক দিক দিয়ে নয়, অর্থনীতি, পরিবেশ ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রতিবেদন ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করে।

অতীতের প্রেক্ষাপট

  • ২০১৬ ও ২০১৭ সালে রাখাইনে একাধিক গাড়ি হামলা, বাড়ি পোড়ানো ও সাধারণ রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন গুলোর ফলে ব্যাপক অভিবাসনের ঢেউ ওঠে।

  • ওই সময় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সহযোগিতা শুরু হয়; Cox’s Bazar-এ বিশাল অভিবাসী শিবির গড়ে ওঠে। পূর্বের কিছু ছোটআকারের আসার ঘটনা রয়েছে, তবে ২০১৭-এর পর এ সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

বর্তমান অবস্থা

বিষয় তথ্য
সংখ্যা ও অবস্থান বাংলাদেশে রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা শরণার্থী ১,০০৬,০০০ জনেরও বেশি, অধিকাংশই Cox’s Bazar-এ, পাশাপাশি Bhasan Char-এ প্রায় ৩৭,০৮৮ জন রয়েছেন।
মানবিক সহায়তা ও অর্থায়ন ২০২5-26 সালের Joint Response Plan (JRP) এর অধীনে প্রায় US$ 934.5 মিলিয়ন তহবিল প্রয়োজন 1.48 মিলিয়ন মানুষকে সহায়তা করার জন্য।
খাদ্য অনুদান হ্রাস WFP ঘোষণা করেছে যে তহবিলের অভাবে প্রতি রোহিঙ্গা মাসিক খাদ্য ভাতা US$12.50 থেকে কমিয়ে US$6 করা হবে; যা অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ।
শরণার্থীর জন্ম ও শিশুদের অংশ শরণার্থী জনগোষ্ঠীর ৫১% শিশু, নতুন শিশু প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে কিন্তু শিক্ষায়, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবায় সুযোগ কম।
প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা ও বাধা বাংলাদেশের অধিকারিকরা একটি “রোডম্যাপ” তৈরি করতে বলছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন নিয়ে, যেখানে বিশ্বাসযোগ্য ও নিরাপদভাবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পুনর্বাসিত করার প্রক্রিয়া থাকতে হবে।তবে রাখাইন রাজ্য এখনো নিশ্চিতভাবে নিরাপদ নয় বলেই শরণার্থীদের উদ্বেগ রয়েছে।

বিশ্লেষণ

  1. অর্থনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাব
    Cox’s Bazar এলাকার স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও সরকারি অবকাঠামোতে চাপ বেড়ে গেছে—পানি, বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্যসেবায় অতিরিক্ত চাহিদা। স্থানীয় পরিবেশের অবনতি হচ্ছে, বনাঞ্চল ও পাহাড় ধ্বংসের খবরও পাওয়া গেছে।

  2. মানবিক ও সামাজিক সংকট
    খাদ্য ভাতার হ্রাস, শিশুর পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্য সেবা ঘাটতির কারণে শরণার্থীদের মর্যাদা ও সাধারণ জীবনযাত্রাও হুমকির মুখে পড়েছে। নারী ও শিশুরা অধিক ঝুঁকিতে রয়েছেন যৌন নির্যাতন ও অত্যাচারের সম্ভাবনায়।

  3. রাজনৈতিক ও প্রক্রিয়াগত বাধা
    রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছাসেবক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন করার বিষয়ে বড় মন্থরতা রয়েছে। রাখাইন রাজ্য এখনও অপর্যাপ্ত নিরাপদ বলে রোহিঙ্গারা বারবার দাবি করেছেন। মিয়ানমার কর্তৃক তাদের নাগরিকত্ব ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার প্রমাণযোগ্য সিদ্ধান্ত এখনও কার্যকর হয়নি।

  4. আর্থিক সংকট ও আন্তর্জাতিক সহায়তা
    দানকারীদের মনোযোগ অন্যান্য বিশ্বব্যাপী সংকটগুলোর দিকে সরছে। অর্থায়নের ঘাটতি কারণে জরুরী সেবাসমূহ বন্ধ হওয়ার ধুঁকিতে। WFP-এর খাদ্য ভাতার হ্রাস একটি উল্লেখযোগ্য সংকেত।

পরামর্শ

  • দ্রুত ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন রোডম্যাপ তৈরির প্রয়োজন। বাংলাদেশের পাশাপাশি মিয়ানমারকে অবশ্যই শরণার্থীদের নিরাপদ পরিবহনের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

  • খাদের ভেতর না পড়ে, মানবাধিকার, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবার অব্যাহত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

  • জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা বাড়াতে হবে, কারণ Cox’s Bazar অঞ্চলের ঝুঁকি দিন দিন বেড়ে চলেছে।

  • আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অর্থায়ন বাড়িয়ে বাংলাদেশের উপর চাপ কমানো উচিত—কারণ এটি একটি সুদীর্ঘ ও টেকসই দায়িত্ব।

আরও দেখুন

নাসা গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধে প্রশাসক নিয়োগ

নাসা গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতনাদি পরিশোধের লক্ষ্যে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *