শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য জাতিসংঘের বৈঠক, কিন্তু শরণার্থীরাই নেই!

 আমেরিকা বাংলা ডেস্ক: বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের কীভাবে সাহায্য করা যায়, তা নিয়ে বিশ্ব নেতারা কথা বলবেন। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, সেই শিবির থেকে কেউই জাতিসংঘের এই সভায় যোগ দিচ্ছেন না।

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে বাস করে। সেখান থেকে তাদের সহজে বের হতে দেওয়া হয় না। তাদের দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হয়েছে, স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের নিজেদের দেশ মিয়ানমার থেকে তারা বিতারিত।
মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর পেরিয়ে গেছে আট বছর । কিন্তু তারা এখনো অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছে। মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের একটি সভায় বিশ্ব নেতারা আলোচনা করবেন কীভাবে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো যায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় শরণার্থী শিবির থেকে কোনো রোহিঙ্গা প্রতিনিধিই থাকছেন না।

শিবিরের একজন রোহিঙ্গা নেত্রী শওকত আরা বলেন, “ওনারা আমাদের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন, অথচ আমরাই সেখানে যেতে পারছি না, এটা কেমন কথা?”

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিকত্ব হারিয়েছে, তাই তাদের পক্ষে শিবির থেকে বাইরে কোথাও ভ্রমণ করা প্রায় অসম্ভব। যদিও আগে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের বিভিন্ন সভায় যোগ দেওয়ার জন্য কয়েকজন রোহিঙ্গাকে পাঠিয়েছিল, কিন্তু এবারের সম্মেলনের জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমেরিকার ভিসা পাওয়া, রাষ্ট্রহীন হিসেবে ভ্রমণের অনুমতি না পাওয়া, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কে বা কারা যাবেন তা ঠিক করা—এই সবকিছু বেশ জটিল। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি খলিলুর রহমান বলেন, “এতসব ঝামেলার কথা ভেবে আমরা আর চেষ্টা করিনি।”

যদিও সম্মেলনে পশ্চিমা দেশগুলোতে বসবাসকারী প্রবাসী রোহিঙ্গারা থাকবেন, কিন্তু শওকত আরার মতো শিবিরের বাসিন্দারা মনে করেন, তারা তাদের কষ্টের কথাগুলো ঠিকমতো তুলে ধরতে পারবেন না। তিনি বলেন, “ওনারা তো শিবিরে এক রাতও থাকেননি, আমাদের পরিস্থিতি কীভাবে বোঝাবেন?”

এমনকি গত মাসে রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি সৈয়দ উল্লাহও এই সম্মেলনের বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি তার ছোট্ট ঘর থেকে ফোনেই সম্মেলনের খবর নেবেন। তিনি বলেন, “শরণার্থীদের বাদ দিয়ে তাদের সমস্যার সমাধান কীভাবে সম্ভব? আমাদের ছাড়া এই সম্মেলন অর্থহীন।”

এই সভার আয়োজন করা হয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে। তিনি বিশ্বকে আবারও রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা মনে করিয়ে দিতে চান। কিন্তু মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলতে থাকায়, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহী—উভয় পক্ষই রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

দুঃখের বিষয় হলো, বিশ্বের মানুষ ধীরে ধীরে এই সংকট ভুলে যাচ্ছে এবং সাহায্যের পরিমাণও কমে আসছে। জার্মানি-প্রবাসী রোহিঙ্গা কর্মী নে সান লুইন, যিনি সম্মেলনে যোগ দেবেন, তিনিও মনে করেন, “বেশিরভাগ রোহিঙ্গা তো শিবিরেই থাকে। তাদের কথা আমাদের মাধ্যমে নয়, সরাসরি তাদের মুখ থেকেই শোনা উচিত।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা রোহিঙ্গা মাউং সায়েদুল্লাহও এই সম্মেলনে কথা বলবেন। তিনি শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের সুযোগ না দেওয়ায় জাতিসংঘের সমালোচনা করে বলেন, “ওনারা আরেকটু চেষ্টা করলেই এটা সম্ভব হতো।”

আরও দেখুন

জোহরান মামদানি

বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটিতে জোহরান মামদানির জনপ্রিয়তা: নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক জাগরণ!

America Bangla Report | নিউইয়র্ক, অক্টোবর ২০২৫ নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন Zohran Mamdani …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *