হঠাৎ ইউরোপ কেনো ইসরায়েলের বিপক্ষে ফুসে উঠেছে?

হঠাৎ ইউরোপ কেনো ইসরায়েলের বিপক্ষে ফুসে উঠেছে?
হঠাৎ ইউরোপ কেনো ইসরায়েলের বিপক্ষে ফুসে উঠেছে?

যুদ্ধের ধোঁয়া যখন গাজার আকাশ ছেয়ে ফেলল, ইউরোপের হৃদয়ে একটা পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করল। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের জন্মের পর থেকে ইউরোপ তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হলোকাস্টের ছায়ায়, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো ইসরায়েলকে সামরিক, অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে এসেছে। ইইউ-র সাথে বাণিজ্য চুক্তি, প্রযুক্তি বিনিময়—সবকিছু মজবুত। কিন্তু ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া যখন গাজায় বোমাবর্ষণে পরিণত হল, তখন ছবিটা বদলাতে শুরু করল। হাজার হাজার নিরীহ মানুষের মৃত্যু, হাসপাতাল ধ্বংস, খাদ্য সংকট—এসব দেখে ইউরোপের জনগণের মনে অসন্তোষ জমতে লাগল।

প্রথমে রাস্তায় নামল প্রতিবাদীরা। ২০২৪-এর শুরুতে লন্ডন, প্যারিস, বার্লিনে লাখো মানুষ মিছিল করল, “যুদ্ধ বন্ধ করো, গাজা বাঁচাও” স্লোগান দিল। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের খবরে বলা হয়েছে, এই প্রতিবাদগুলো ইউরোপের বড় শহরগুলোকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। ২০২৫-এর অক্টোবরে বার্সেলোনা, রোম, লিসবনে আরও বড় মিছিল—হাজার হাজার মানুষ ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলল। পুলিশ লন্ডনে ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করল, কিন্তু প্রতিবাদ থামেনি। এই জনরোষ ইউরোপীয় নেতাদের চাপে ফেলল। ফলে, কূটনৈতিক পরিবর্তন এল।

মে ২০২৪-এ আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দিল। তারপর স্লোভেনিয়া, আর্মেনিয়া। ২০২৫-এর সেপ্টেম্বরে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, অ্যান্ডোরা যোগ দিল—মোট ১৫৬ দেশ প্যালেস্টাইনকে রাষ্ট্র হিসেবে মানল। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগালও পরিকল্পনা করছে। এটা ইসরায়েলের জন্য বড় ধাক্কা। ইইউ-র বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার ফ্রান্সেসকা আলবানেসে ২০২৪-এর এপ্রিলে বললেন, ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থগিত করতে হবে গণহত্যা রোধে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা, ইউরোপের জনমত ইসরায়েলের যুদ্ধপন্থার বিরুদ্ধে গেছে, কিন্তু ঐতিহাসিক সম্পর্কের কারণে নেতারা ধীরে চলছেন।

ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যের মতো শক্তিশালী দেশগুলোর অবস্থান বদলেছে। ২০২৫-এর জুলাইতে এই তিন দেশ যৌথভাবে বলল, গাজায় মানবিক সংকট শেষ করতে ইসরায়েলকে সাহায্য পথ খুলতে হবে। ফ্রান্স অস্ত্র মেলা থেকে ইসরায়েলি কোম্পানিকে বাদ দিল। জার্মানিতে পোল দেখিয়েছে, ৬৬% মানুষ চান ইইউ ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিক। আরব সেন্টারের বিশ্লেষণে বলা, ২০২৫-এ ইউরোপের কথাবার্তায় পরিবর্তন এসেছে—ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ইসরায়েলের কঠোর নীতির সমালোচনা করছে, যেমন অনাহার সৃষ্টি। জি৭-এর বিবৃতিতে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

এই পরিবর্তনের পেছনে জনগণের চাপ। ইউরোপের তরুণরা, শিক্ষিত সমাজ সোশ্যাল মিডিয়ায় গাজার ছবি দেখে জাগ্রত হয়েছে। আরব নিউজে বলা, প্রতিবাদের কারণে ইসরায়েলকে স্পোর্টস, সংস্কৃতি থেকে বয়কটের দাবি উঠেছে। ইসরায়েলের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার ইইউ—চুক্তি সংশোধনের কথা উঠেছে, যা ইসরায়েলের অর্থনীতিকে ধাক্কা দিতে পারে।

কিন্তু এই গল্পের শেষটা আশার। ইউরোপের এই অবস্থান দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পথ খুলছে। ফ্রান্সের নেতৃত্বে জার্মানি সমর্থন দিয়েছে দুই-রাষ্ট্র প্রস্তাবে। চ্যাথাম হাউসের বিশ্লেষণে বলা, ইউরোপ ও উপসাগরীয় দেশগুলো মিলে স্বীকৃতি দিলে এটা প্রতীকী নয়, বাস্তব পরিবর্তন আনবে। কৃষক তার খেতে বসে বোঝে—যুদ্ধ কারও লাভ করে না, শান্তি সবার জন্য। শহুরে শিক্ষিত মানুষ দেখে, ন্যায়ের লড়াই বিশ্বকে এক করে। ইউরোপের এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির দরজা খুলছে। গাজার শিশুরা হাসবে, ইসরায়েল নিরাপদ হবে। এই আশায়, পরিবর্তনের গল্প চলতে থাকবে

আরও দেখুন

প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন ও NID আবেদনের নিয়ম!

ওয়াশিংটন ডিসি: বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের (প্রথমবার) ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা ও জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *