৩৩টি ওষুধের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে: ইডিসিএল

রাষ্ট্রীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) জানিয়েছে, তাদের অত্যাবশ্যকীয় ৩৩টি ওষুধের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, গত ৬০ বছরে ছয় মাসের মধ্যে এত বড় অগ্রগতি আগে কখনো হয়নি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে অধিকাংশ ওষুধের দাম কমানো সম্ভব হবে এবং এতে সরকারের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে।

বুধবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ইডিসিএলের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামাদ মৃধা। তিনি জানান, এখন প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এর আগে অপ্রয়োজনীয় ওষুধও বড় পরিমাণে উৎপাদিত হতো। সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান এবং বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান এ খাতে মূল লক্ষ্য মানুষের সুস্থতা হওয়া উচিত বলে নির্দেশ দিয়েছেন।

সামাদ মৃধা বলেন, আগে কাঁচামাল কেনা হতো অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়, এখন তা টেন্ডার ভিত্তিক, প্রতিযোগিতামূলক ও স্বচ্ছভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদারকি বাড়ানোর ফলে উৎপাদনের মান উন্নত হয়েছে, ওভারটাইম কমানো হয়েছে এবং উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। কর্মীদের উৎসাহিত করতে ‘মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম’ চালু করা হয়েছে, এবং শ্রমিক ও ইউনিয়নের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরবরাহ চেইন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী বায়োলজিক্যাল পণ্যের যেমন ইনসুলিন ও ইরিথ্রোপোয়েটিনের চাহিদা বাড়ায়, ইডিসিএল এখন সাধারণ ওষুধ ছাড়াও ভ্যাকসিন ও বায়োলজিক্যাল পণ্য উৎপাদনের দিকে কাজ শুরু করেছে। এটি শুধু ঐতিহ্যবাহী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নয়, বরং আধুনিক, দক্ষ এবং জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিশ্রুতিশীল একটি ভবিষ্যতমুখী প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠছে।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকিউরমেন্ট পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সামাদ মৃধা জানান, ভবিষ্যতে দুটি আধুনিক প্ল্যান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে—একটি বায়োটেক প্ল্যান্ট, যেখানে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি চলছে, এবং অপরটি ঢাকার বাইরে সিরাজদিখানে, যা এফডিএ’র গাইডলাইন অনুযায়ী আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হচ্ছে।

জনবল কাঠামোতে সংস্কারের কথাও উল্লেখ করে তিনি জানান, ইতোমধ্যে ৭২২ জন অদক্ষ ও অপ্রয়োজনীয় কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। আরও এক হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। সামাদ মৃধা বলেন, ‘উৎপাদনক্ষমতার তুলনায় ইডিসিএলে দুই হাজারের বেশি অতিরিক্ত জনবল ছিল, যার মধ্যে অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জাল এবং অধিকাংশ অদক্ষ। অনেকেই কোনো কাজ না করেই দীর্ঘদিন বেতন ভোগ করছিল। বিগত সরকারের আমলে পছন্দমতো নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং এমনকি এক কক্ষে কর্মীদের বসিয়ে বেতন দেওয়া হতো, যার নামকরণ করা হয়েছিল ‘রোহিঙ্গা রুম’। এ ধরনের অপচয় আর হতে দেওয়া হবে না।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম দূর করে ইডিসিএলকে দক্ষ, সাশ্রয়ী ও জনমুখী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার জন্য কাজ চলছে। অপ্রয়োজনীয় জনবল কমানো হয়েছে যাতে প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখা যায়।’

আরও দেখুন

ওয়াসার পাঁচ বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি এক যুগেও

ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা এতটাই বেড়েছে যে এখন নতুন করে পানি তোলা প্রায় অসম্ভব …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *