বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটিতে জোহরান মামদানির জনপ্রিয়তা: নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক জাগরণ!

জোহরান মামদানি
ফাইল ফটো: জোহরান মামদানি

America Bangla Report | নিউইয়র্ক, অক্টোবর ২০২৫

নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন Zohran Mamdani — এক তরুণ মুসলিম, দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত প্রগতিশীল নেতা, যাঁর জনপ্রিয়তা বর্তমানে দ্রুত বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটিতে। বিশেষ করে কুইন্স ও জ্যাকসন হাইটসের মতো এলাকায় তাঁর প্রচারণায় “বাংলাদেশি আণ্টি” রা হয়ে উঠেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রাসরুটস কর্মী।

বাংলাদেশি আণ্টিদের ‘ভোট জয়’-এর গল্প

মামদানির প্রচারণা শুরু থেকেই সাধারণ অভিবাসী পরিবারের জীবনযাত্রা ও সংগ্রামের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তাঁর এক বক্তব্যে তিনি বলেন:

“This is the victory of the Bangladeshi aunties who knocked on door after door — spreading hope and solidarity.”

এই বক্তব্যটি ভাইরাল হয়েছে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি মহলে। অনেকেই এটাকে তাঁদের পরিশ্রম, স্বপ্ন ও অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন।

কেন মামদানি জনপ্রিয়

১. ভাষা ও সংস্কৃতির সংযোগ:

মামদানি প্রচারণায় বাংলা ভাষা ও দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক রেফারেন্স ব্যবহার করেছেন। এতে মধ্যবয়সী ও প্রবাসী প্রথম প্রজন্মের ভোটারদের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়েছে।

২. ইমিগ্র্যান্ট ইস্যুতে সরাসরি অবস্থান:

রেন্ট কন্ট্রোল, সাশ্রয়ী বাসস্থান, পাবলিক ট্রানজিট ও স্বাস্থ্যসেবার মতো ইস্যুতে তাঁর স্পষ্ট অবস্থান কমিউনিটির মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর হৃদয় ছুঁয়েছে।

৩. মুসলিম পরিচয়ের সাহসী উপস্থাপন:

অনেকেই মনে করেন, তিনি মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় পরিচয় লুকিয়ে না রেখে গর্বের সঙ্গে উপস্থাপন করছেন, যা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নতুন আত্মবিশ্বাস তৈরি করছে।

৪. গ্রাসরুটস আন্দোলনের প্রতীক:

তাঁর প্রচারণায় ছোট ছোট ডোনেশন, তরুণ স্বেচ্ছাসেবক এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক সমর্থনই মূল শক্তি। “এটি সাধারণ মানুষের জয়,” বলেন এক বাংলাদেশি ভলান্টিয়ার।

কিছু সমালোচনা ও চ্যালেঞ্জও আছে

সবাই অবশ্য একমত নয়। কিছু বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও ধর্মীয় নেতা মামদানির কিছু নীতিতে আপত্তি তুলেছেন—বিশেষ করে নারী অধিকার ও সেক্স-ওয়ার্ক সম্পর্কিত অবস্থান নিয়ে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি তাঁর জনপ্রিয়তাকে পুরোপুরি থামাতে পারেনি, বরং তরুণ ভোটারদের আরও দৃঢ়ভাবে একত্র করেছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মামদানির উত্থান শুধু একজন প্রার্থীর জনপ্রিয়তা নয়—এটি দক্ষিণ এশীয়, বিশেষ করে বাংলাদেশি-আমেরিকানদের রাজনৈতিক জাগরণের প্রতীক।

নিউইয়র্কের কুইন্স, ব্রুকলিন এবং ব্রঙ্কস জেলায় বাংলাদেশি ভোটারদের ভোটার নিবন্ধন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে ২০২৪–২৫ সালে।

যদি মামদানি সফল হন, তবে এটি শুধু এক ব্যক্তির জয় নয়—এটি হবে বাংলাদেশি প্রবাসী ভোটারদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ঐতিহাসিক অগ্রগতি।

কমিউনিটির কণ্ঠ

“মামদানি আমাদের মতো মানুষের কথা বলে। ওর মধ্যে আমি আমার ছেলের ভবিষ্যৎ দেখি,” — বললেন কুইন্সের বাসিন্দা সালমা হোসেন।

“তিনি আমাদের দেখিয়েছেন, ইমিগ্র্যান্টরাও নিউইয়র্ক সিটির নেতৃত্ব দিতে পারে,” — যোগ করলেন ব্রঙ্কসের তরুণ ভোটার মাহমুদ রহমান।

শেষ কথা

জোহরান মামদানি এখন বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটির কাছে কেবল এক রাজনীতিক নন, বরং এক প্রেরণা — যিনি দেখিয়েছেন, অভিবাসীদের কণ্ঠস্বরও মূলধারার রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।

আগামী নির্বাচনে তাঁর সাফল্য শুধু নিউইয়র্ক নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশীয় প্রবাসী সমাজের জন্য এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করতে পারে।

আরও দেখুন

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ প্রবেশ চেষ্টা - ভারতীয় ব্যক্তির জরিমানা

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ প্রবেশ চেষ্টা – ভারতীয়কে ৪০ লাখ রুপি জরিমানা

আমেরিকা বাংলা ডেস্ক: পাঞ্জাবের এক গ্রামীণ পরিবারের ৩৯ বছরের গুরপ্রীত সিং-এর জীবন যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *