দুই বছর ধরে ফিলিস্তিনে চলমান ইসরাইলি হামলার ভয়াবহতায় রেহাই পাচ্ছে না কেউ—শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ, এমনকি ক্রীড়াবিদরাও। ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজা যখন সহ্য করে চলেছে নির্মমতার শেষ সীমা, ঠিক তখনই বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে আলোড়ন তোলে আরেক মর্মান্তিক মৃত্যু—ফিলিস্তিনি ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা সুলেমান আল-ওবাইদের প্রাণহানি। গাজার ক্রীড়াঙ্গন এখন যেন এক ‘ধ্বংসাবশেষ মৃত্যুপুরী’।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮০০-র বেশি ক্রীড়াবিদ প্রাণ হারিয়েছেন। ফিলিস্তিনি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ) জানায়, গত ২২ মাসে নিহত ৮০৮ ক্রীড়াবিদের মধ্যে ৪৩৭ জন ছিলেন ফুটবলার, আর তাদের অর্ধেকই শিশু। সর্বশেষ প্রাণ হারানোদের মধ্যে আছেন ফিলিস্তিন জাতীয় দলের সাবেক তারকা সুলেমান আল-ওবাইদ। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে মানবিক সহায়তার জন্য অপেক্ষায় থাকা সাধারণ মানুষের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় নিহত হন ৪১ বছর বয়সী এই ফুটবলার।
‘ফিলিস্তিনের পেলে’ নামে পরিচিত সুলেমান ছিলেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলারদের একজন। বল পায়ে তার অসাধারণ দক্ষতা, নজরকাড়া গোল এবং অনুপ্রেরণামূলক উপস্থিতি তাকে দিয়েছে বিশেষ মর্যাদা। ২০০৭ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর ২০১০ সালে ওয়েস্ট এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন চ্যাম্পিয়নশিপে ইয়েমেনের বিপক্ষে তার বাইসাইকেল কিকের গোল সাড়া জাগিয়েছিল তুমুলভাবে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি করেছেন শতাধিক গোল এবং হয়েছেন অসংখ্য তরুণ ফুটবলারের অনুপ্রেরণা ও পরামর্শদাতা। মাঠের ভেতরে-বাইরে তার অবদান ছিল অপরিসীম।
পিএফএর হিসাবে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলা, অবরোধ ও অনাহারে প্রাণ হারানো ফুটবলারের সংখ্যা ৪৩৭ জন, যার মধ্যে ১০৩ জন শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়কালে গাজায় কমপক্ষে ৬১ হাজার ১৫৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে অন্তত ১৯৩ জন মারা গেছেন ক্ষুধায়।
দ্বিতীয় বছরে পা রাখা এই গণহত্যা ফিলিস্তিনি ক্রীড়াঙ্গনকে কার্যত নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। ক্রীড়াবিদ, কোচ, রেফারি—কেউ রক্ষা পাননি। বোমা হামলায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ক্রীড়া ভবনগুলো, যেগুলো এখন গণকবর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ ক্রীড়া অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।
পিএফএ জানায়, গাজা ও পশ্চিম তীরে ২৮৮টি ক্রীড়া স্থাপনা সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করেছে ইসরাইলি বাহিনী—এর মধ্যে রয়েছে স্টেডিয়াম, জিমনেসিয়াম, ফুটবল ক্লাব এবং পিএফএর সদর দপ্তরও। এর মধ্যে ২৬৮টি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে গাজায়, আর ২০টি পশ্চিম তীরে।
এমন পরিস্থিতিতে গাজার ক্রীড়াবিদ ও বাসিন্দারা এখন কেবল বেঁচে থাকার জন্য লড়ছেন। যেখানে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে মানুষ নতুন দিনের স্বপ্ন দেখে, সেখানে ফিলিস্তিনের ক্রীড়াবিদরা ভোর হলে গুনে যান মৃত্যুপ্রহর।