বহুমুখী সংকটে সরকারি চার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ

দেশের সরকারি চার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ দীর্ঘদিন ধরে বহুমুখী সংকটে ভুগছে। উন্নত শিক্ষার আশায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই কলেজগুলোতে ভর্তি হলেও শিক্ষক সংকট, স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ না হওয়া, ফলাফলে বিলম্ব, গবেষণাবান্ধব পরিবেশের অভাবসহ নানা সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীরা পূর্ণ সুফল পাচ্ছেন না। এই সমস্যা সমাধানে বিগত আওয়ামী সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা চার কলেজে স্থায়ী ও সময়োপযোগী সমাধানের দাবিতে গত আড়াই মাস ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি) মডেলের একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে সমস্যার সমাধান করার দাবি জানানো হয়েছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা ক্লাস বর্জন, অবস্থান কর্মসূচি এবং ৩১ জুলাই থেকে ১০ দিনের আলটিমেটামের মাধ্যমে আমরণ অনশন ঘোষণা করেছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি সমর্থন করে ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনও তাদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে বৈঠকে কিছু দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তবে সব দাবি পূরণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখনও ক্লাসে ফেরেননি।

বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী ধ্রুব জানিয়েছেন, ৮০ দিনের বেশি সময় ধরে তারা ক্লাস ও পরীক্ষাবর্জনসহ একাডেমিক শাটডাউন পালন করছেন। সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পরও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। শিক্ষা উপদেষ্টা একেএম তাজকির-উজ-জানান শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন এবং শিক্ষক সংকট সমাধানের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। তবে বিআইটি মডেলের স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি বর্তমানে সরকারের পক্ষে বাস্তবায়নযোগ্য নয়।

চারটি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অবস্থার সারসংক্ষেপ অনুযায়ী, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বরিশাল ও সিলেট কলেজে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। ফরিদপুর কলেজ ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০১৩ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু হয়। ময়মনসিংহ ও সিলেট কলেজ ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত, বরিশাল কলেজ ২০১৮ সালে। সিলেট কলেজ ছাড়া বাকি তিনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, চার কলেজে দীর্ঘ ১৮ বছরেও কোনো স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ হয়নি। শিক্ষক নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা, সেশনজট, ফলাফলে বিলম্ব, অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নপত্র এবং মূল্যায়নে অস্বচ্ছতার কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও পেশাগত ভবিষ্যৎ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও আউটকাম বেজড এডুকেশন যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত।

অবশেষে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছেন, সমস্যা সমাধানের একমাত্র কার্যকর পথ হলো বিআইটি মডেলের একটি স্বাধীন কমিশন। এই মডেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব একাডেমিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা দেয়, যেখানে একাধিক দপ্তর ও কর্তৃপক্ষের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। শিক্ষার্থীরা চায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্তি বাতিল করে এই মডেলের ভিত্তিতে চার কলেজকে একটি স্বাধীন, টেকসই ও সময়োপযোগী কমিশনের অধীনে আনা হোক, যা তাদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক স্বাতন্ত্র্যতা নিশ্চিত করবে।

আরও দেখুন

শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারে বাস্তবমুখী উদ্যোগ প্রয়োজন: অধ্যাপক আমানুল্লাহ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের গুরুত্বের ওপর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *