বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নতুন ধরনের ফ্যাসিবাদ জন্ম নিতে পারে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বর্তমান ব্যবস্থার মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নতুন ধরনের ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হতে পারে। নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে ইতিবাচক বললেও, প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন আয়োজন করা হলে তা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল হবে। তিনি নির্দলীয় সরকারের অধীনে ‘জুলাই সনদ’-এর আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান। মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সারা দেশে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে এবং জনগণ যদি অবাধ ও নির্বিঘ্নভাবে ভোট দিতে পারে, তবে ইসলামী আদর্শের শক্তিকেই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করবে।

বুধবার সকালেই খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আরাফাত আবাসিক এলাকায় উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ভোটার সমাবেশে তিনি এই আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট-বাকশালী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থেকে দেশের আলেম ও ওলামাদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালিয়েছে। তবে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের পতন হয়েছে। তাই আগস্ট বিপ্লবকে টেকসই করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, জুলাই জাতীয় সনদের প্রণয়ন অবিলম্বে সম্পন্ন করে তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজন।

তিনি সতর্ক করেছেন যে, দেশের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্বৈরাচারের অনুসারীরা সক্রিয় রয়েছে। এজন্য আসন্ন নির্বাচনে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে হবে এবং নেতা-কর্মীরা এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, জনগণ এখন ইসলামী দলগুলোকে নেতৃত্বের আসনে দেখতে চায় এবং দেশে ইসলামের পক্ষে যে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে, তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে, ইনশা আল্লাহ। বর্তমানে মানুষের মুখে দুটি প্রধান স্লোগান ছড়িয়েছে—‘নতুন বাংলাদেশ’ ও ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’।

মিয়া গোলাম পরওয়ার উল্লেখ করেন, আসন্ন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন দ্রুত সম্পন্ন না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম ব্যর্থ হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সমান সুযোগের ব্যবস্থা করতে হবে, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের আপামর জনতা জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্রের বাস্তবায়ন না হওয়ায় উদ্বিগ্ন। শহীদ ও আহতদের পরিবারসহ জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। ৬টি কমিশন গঠন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি আলোচনা শেষে ১৯টি বিষয়ে জাতীয় সনদ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও প্রধান উপদেষ্টার পাঠানো জুলাই ঘোষণাপত্রে তা উল্লেখ নেই, ফলে হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগের মূল্যহীন হয়ে গেছে।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ১৬ বছরের জুলুম, নিপীড়ন, গুম-খুন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। এই অর্জন সম্পূর্ণ জনগণের। তিনি বলেন, দেশে যেন আর ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে, তাই ইনসাফপূর্ণ, বৈষম্যমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা হবে। জনগণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে এই দায়িত্ব দিয়েছে। জুলাই আন্দোলনের চেতনা ধরে রেখে, জুলাই ঘোষণাপত্র ও জাতীয় সনদের দাবিকে সর্বজনীন দাবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

আরও দেখুন

ওয়াসার পাঁচ বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি এক যুগেও

ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা এতটাই বেড়েছে যে এখন নতুন করে পানি তোলা প্রায় অসম্ভব …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *