হাসিনার ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ পরাজিত করা প্রজন্ম সবকিছুই করতে সক্ষম

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (১৩ আগস্ট) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে “ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকা” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (খুবিসাস) ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান বলেন, জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণরা দেশের জন্য নতুন পথ উদ্ভাবন করেছে। দীর্ঘ ১৬-১৭ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনের পর গড়ে উঠেছে একটি সাহসী ও নির্ভীক প্রজন্ম, যা সত্যিই বিস্ময়কর। তিনি যোগ করেন, কোনো রাষ্ট্রে ফ্যাসিবাদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে জন্মায় না; বরং ব্যবসায়ী, আমলা, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও কিছু সাংবাদিক ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে এবং জনমত গঠনের চেষ্টা চালায়।

তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থান ছাড়া ফ্যাসিবাদ উৎখাত সম্ভব নয়, এবং জুলাই আন্দোলন এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে।” সাংবাদিকদের ভূমিকার প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান উল্লেখ করেন, তরুণ সাংবাদিকরা আন্দোলনে দৃঢ়ভাবে লড়াই করেছেন, কিন্তু অনেক প্রবীণ সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক পক্ষপাতমূলক অবস্থান নিয়েছেন বা আত্মনিয়ন্ত্রণে (সেল্ফ সেন্সরশিপ) গেছেন। তার মতে, সৎ, সাহসী ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী সাংবাদিক হতে হলে এস্টাব্লিশমেন্টের বিরুদ্ধেও লিখতে হবে এবং উভয়পক্ষের বক্তব্য সমানভাবে তুলে ধরতে হবে।

বাকস্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জুলাই আন্দোলন আমাদের বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু পূর্ণ মুক্তি এসেছে কি না, তা নির্বাচনের পর বোঝা যাবে। নির্বাচিত সরকার অতীত থেকে শিক্ষা না নিলে ফ্যাসিবাদ আবারও ফিরে আসতে পারে।” জ্ঞানচর্চার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “বলবার আগে শেখা জরুরি। তরুণদের উদ্যম ও স্পৃহা নিয়েই এগোতে হবে।”

প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলন দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যেখানে ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বাকস্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করেছে। তার মতে, গণমাধ্যম একটি স্বাধীন সমাজের অন্যতম স্তম্ভ, আর ফ্যাসিবাদ যখন মাথাচাড়া দেয়, প্রথম আঘাতটি পড়ে গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর—যা জুলাই আন্দোলনে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবী, আইন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত ডিন প্রফেসর শেখ মাহমুদুল হাসান এবং ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মো. নাজমুস সাদাত। এছাড়া বক্তব্য রাখেন জুলাই অভ্যুত্থান দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর শরিফ মোহাম্মদ খান, আমার দেশ পত্রিকার খুলনা ব্যুরো প্রধান এহতেশামুল হক শাওন এবং জুলাই আন্দোলনের কর্মী আয়মান আহাদ।

সভায় সভাপতিত্ব করেন খুবিসাস সভাপতি আলকামা রমিন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী জারিন প্রভা ও ইউআরপি ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান আকাশ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী, জুলাই আন্দোলনের কর্মী এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও দেখুন

ওয়াসার পাঁচ বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি এক যুগেও

ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা এতটাই বেড়েছে যে এখন নতুন করে পানি তোলা প্রায় অসম্ভব …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *