‘বিরিয়ানি জিহাদ’ তকমা দিয়ে খাদ্য বিতরণকারী মুসলিমদের গ্রেপ্তার

ভারতে উগ্রপন্থী হিন্দুদের দৌরাত্ম্য
ভারতে উগ্রপন্থী হিন্দুদের দৌরাত্ম্য

মোদির ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার ক্রমবর্ধমান আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। উত্তর প্রদেশের বন্যা কবলিত সম্প্রদায়ের মাঝে খাবার বিতরণকারী মুসলিম সাহায্য কর্মীদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুই মুসলিমকে। একজন উগ্র হিন্দুত্ববাদী সমর্থকের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে ফারুখাবাদ জেলায়। এঘটনায় জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। রায়পুর চিনহাট পুর গ্রামের নির্বাচিত প্রধান মোহাম্মদ শামি, তার ছেলে মোহাম্মদ সাইফ আলী এবং তালিব আলীর বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্মীয় উৎসব জন্মাষ্টমীর সময় আমিষ বিরিয়ানি পরিবেশনের অভিযোগ আনা হয়। হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিম সম্প্রদায়কে অপমান করতে ‘লাভ জিহাদ’, ‘থুথু জিহাদ’ এবং অন্যান্য ধরণের পদ্ধতিগত প্রচারণার আদলে পুরো ঘটনাটিকে ‘বিরিয়ানি জিহাদ’ হিসাবে প্রপাগাণ্ডা চালাচ্ছে।

রায়পুর চিনহাট পুরের বাসিন্দা সুনীল অভিযোগটি দায়ের করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ওই খাদ্য বিতরণে ‘মানুষকে বিভ্রান্ত করার এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করার’ একটি প্রচেষ্টা ছিল। তার এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে এবং আরও প্রমাণ সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের নৌকা কাম্পিল এলাকার দুই ডজনেরও বেশি গ্রামের বন্যাদুর্গত গ্রামবাসীদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করছিল। অনেক গ্রামের মানুষ এসে আমাদের কাছ থেকে খাবার সংগ্রহ করেছে। এই অভিযোগটি সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে আমার এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে।’’

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় বাসিন্দা শামির বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেছেন, বিতরণ করা খাবারে প্রয়োজনীয় নিরামিষ খাবার ছিল। তারা জোর দিয়ে বলেছেন, সাহায্য কর্মীরা ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে কেবল বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলিকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করেছেন।

সম্প্রদায়ের সদস্যরা শামির সমর্থনে সমাবেশও করেছেন। তারা অভিযোগগুলিকে সাম্প্রদায়িকতা এবং রাজনীতির বিপজ্জনক মিশ্রণ হিসাবে অভিহিত করে নিন্দা করেছেন।

স্থানীয় সমাজকর্মী আমিনা খান বলেন, ‘‘শামি মোহাম্মদ কখনও কোনও সাম্প্রদায়িক বিতর্কে জড়িত ছিলেন না। এই অঞ্চলের সকলের কল্যাণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, বিশেষ করে সংকটের সময়ে। তাকে ধর্মীয় উস্কানির জন্য অভিযুক্ত করা অত্যন্ত অন্যায্য।’’

স্থানীয় শিক্ষক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, “প্রতি বছর শামি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গ্রামবাসীদের জন্য খাবারের আয়োজন করেন, বিশেষ করে বন্যার মতো সংকটের সময়। দুর্ভাগ্যজনক যে, তার মানবিক কাজকে ধর্মীয় দুর্নীতির অভিযোগে বিকৃত করা হচ্ছে।”

অতিরিক্ত পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট ডঃ সঞ্জয় কুমার সিং বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, সুনীলের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন দায়ের করা হয়েছে।

ডঃ সিং বলেন, “রায়পুর চিনহাট পুরের বাসিন্দা সুনীল থানায় এসে অভিযোগ করেছেন যে, মুখিয়া শামি মোহাম্মদ এবং তার ছেলেরা জন্মাষ্টমীতে আমিষ বিরিয়ানি বিতরণ করেছেন। একটি প্রতিবেদন দায়ের করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং দোষী সাব্যস্ত হলে যে কারও বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আরও দেখুন

প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন ও NID আবেদনের নিয়ম!

ওয়াশিংটন ডিসি: বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের (প্রথমবার) ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা ও জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *