ক্রমাগত মিলিটারি সক্ষমতা বৃদ্ধিতে, সামরিক শক্তিধর দেশে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। গত এক বছরে সামরিক শক্তিধর দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ এগিয়েছে তিন ধাপ। বর্তমানে, বাংলাদেশ পৃথিবীর ৩৭ তম সামরিক শক্তিধর দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্ক, চীন, রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম ও ক্ষেপণাস্ত্র যোগ করার মাধ্যমে শক্তির পাল্লা ভারী করেছে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি, প্রকাশিত গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ডটকমের সূচকে বাংলাদেশের এই অবস্থান উঠে এসেছে। এই তালিকায় বরাবরের মতোই এবারও শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। বিশ্বের ১৪৫টি দেশের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে এই তালিকা প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ডটকম।
সশস্ত্র বাহিনীর আকার, অর্থনৈতিক অবস্থা, লজিস্টিক সক্ষমতা ও ভৌগোলিক অবস্থানের মতো ৬০টির বেশি বিষয় বিশ্লেষণ করে এই সূচক তৈরি করা হয়। সূচকে যে দেশের স্কোর যত কম থাকে সামরিক সক্ষমতার তালিকায় সেই দেশ তত এগিয়ে থাকে।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ২০২৪ সালের তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশের স্কোর শূন্য দশমিক ৫৪১৯। সবচেয়ে কম শূন্য দশমিক ০৬৯৯ স্কোর নিয়ে তালিকার প্রথমে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শীর্ষ দশের তালিকায় এর পরে রয়েছে যথাক্রমে রাশিয়া, চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, জাপান, তুরস্ক,পাকিস্তান ও ইতালি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সামরিক শক্তিমত্তার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার। বাংলাদেশের পরে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটান।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে তালিকায় ভারত চতুর্থ, পাকিস্তান নবম, মিয়ানমার ৩৫তম, শ্রীলঙ্কা ৭৫তম ও নেপাল ১২৮তম অবস্থানে রয়েছে। তালিকার সবচেয়ে শেষে ১৪৫তম অবস্থানে রয়েছে ভুটান। শক্তিমত্তার সূচকে দেশটির স্কোর ৬ দশমিক ৩৭০৪।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে সক্রিয় সেনা রয়েছেন আনুমানিক ১ লাখ ৬০ হাজার। সেনাবাহিনীতে ট্যাংকের সংখ্যা ৩২০টি। সামরিক যান রয়েছে ১৩ হাজার ১০০টি।
অপরদিকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্রিয় সদস্য রয়েছেন ২৫ হাজার ১০০ জন। বাহিনীটির জাহাজগুলোর মধ্যে ফ্রিগেট সাতটি, করভেট ছয়টি, সাবমেরিন দুটি, টহল নৌযান ৩০টি এবং মাইন ওয়ারফেয়ার রয়েছে পাঁচটি। তবে বাংলাদেশের কোনো ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ, বিমানবাহী রণতরী ও হেলিকপ্টারবাহী রণতরী নেই।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সক্রিয় সদস্যের সংখ্যা ১৭ হাজার ৪০০ জন। বাহিনীটির মোট উড়োজাহাজের সংখ্যা ২১৬টি।
এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৪৪টি, হেলিকপ্টার ৭৩টি, পরিবহন বিমান ১৬টি ও প্রশিক্ষণ বিমান ৮৫টি। পাশাপাশি বিশেষ অভিযানের জন্য বিমান বাহিনীর চারটি উড়োজাহাজ রয়েছে।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীতে গত পাঁচ বছরে ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম ও মানববিহীন ড্রোনসহ অন্তত ২৩ ধরনের নতুন আধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধ সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে । চীন ও তুরস্কসহ ১২টি দেশ থেকে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ এসব যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করেছে।
এর মধ্যে সেনাবাহিনীর জন্য ১১ ধরণের, নৌবাহিনীর জন্য আট এবং বিমান বাহিনীর জন্য চার ধরণের যুদ্ধ সরঞ্জাম ক্রয় করা হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিবেদন অনুযায়ী সেনাবাহিনীর জন্য সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম আনা হয়েছে চীন থেকে।
যুদ্ধ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাংক উদ্ধার করে এনে মেরামত করে আবার তা যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোর জন্য জার্মানি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে আর্মার্ড রিকভারি ভেহিক্যাল ফর ট্যাঙ্ক।
ওদিকে এই সময়ের মধ্যে নৌবাহিনীর জন্য চীন থেকে ফ্রিগেট, বিভিন্ন ধরণের মিসাইল ও উপকরণ ছাড়াও চীনের সহায়তা নৌঘাঁটি শেখ হাসিনার সাবমেরিন বেইজ নির্মাণ এবং নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ডের জন্য উপকরণ, প্রশিক্ষণ ও অন্য সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
আর ইটালি থেকে ইউটিলিটি হেলিকপ্টার এনেছে নৌবাহিনী এবং কানাডা থেকে এসেছে অবকাঠামোসহ স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক সিস্টেম।
অন্যদিকে বিমান বাহিনীর জন্য যুক্তরাজ্য থেকে আনা হয়েছে এমকে৫ এয়ারক্রাফট, ফ্রান্স থেকে এয়ার রাডার, ইটালি থেকে মানববিহীন ড্রোন এবং জার্মানি থেকে প্রশিক্ষণ বিমান।