
মধ্যপ্রাচ্যকে বলা হয় পৃথিবীর “কালো সোনার ভাণ্ডার”। সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতারসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো বিশ্ব তেল রপ্তানির প্রধান নিয়ন্ত্রক। বিশ্বের মোট প্রমাণিত তেল মজুদের প্রায় ৪৮% এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের ৪৩% রয়েছে এ অঞ্চলে।
এই কারণে মধ্যপ্রাচ্যের তেল কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিক অস্ত্র ও কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
উৎপাদন ও OPEC+ এর ভূমিকা
-
OPEC (Organization of the Petroleum Exporting Countries) ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যার কেন্দ্র ভিয়েনায়। বর্তমানে সৌদি আরব, ইরান, ইরাকসহ ১৩টি দেশ এর সদস্য।
-
OPEC+-এ রাশিয়া, কাজাখস্তানসহ আরও দেশ যুক্ত হয়েছে।
-
সম্প্রতি (সেপ্টেম্বর ২০২৫) OPEC+ অতিরিক্ত উৎপাদনের ক্ষতিপূরণ সূচি প্রকাশ করেছে, যেখানে ইরাক, কাজাখস্তান ও রাশিয়াকে আগামী মাসগুলোতে প্রতিদিন ৮ লক্ষ ব্যারেল পর্যন্ত উৎপাদন কমাতে হবে।
-
উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের এই নীতি তেলের দামকে বিশ্ববাজারে প্রভাবিত করে। যেমন আগস্ট ২০২৫-এ ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম $66 ব্যারেল ছুঁয়েছে ।
সৌদি আরবের নেতৃত্ব ও মূল্যনীতি
-
সৌদি আরব বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক। ২০২৫ সালের অক্টোবরে সৌদি আরব এশিয়ার বাজারের জন্য তেলের দাম প্রতি ব্যারেল $0.50 কমিয়েছে ।
-
এই মূল্য হ্রাসের মূল উদ্দেশ্য হলো চীন, ভারতসহ এশীয় বাজারে প্রভাব ধরে রাখা।
-
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন শেল অয়েল প্রযোজক ও রাশিয়ার সাথে প্রতিযোগিতায় সৌদি আরব এখনো বিশ্ববাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের প্রধান খেলোয়াড়।
ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা: হরমুজ প্রণালী সংকট
-
হরমুজ প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০% বৈশ্বিক তেল পরিবহন হয় ।
-
২০২৫ সালের মাঝামাঝি ইরান হুমকি দিয়েছিল এ পথ অবরুদ্ধ করার—যদি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা না তোলা হয়
-
এই ধরনের পরিস্থিতি দামকে হঠাৎ $100–150 ব্যারেল পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি ও খাদ্য সংকট বাড়িয়ে তুলবে।
অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য ও ভিশন
-
সৌদি আরব Vision 2030 এর মাধ্যমে অর্থনীতি বহুমুখীকরণ করছে। IMF জানিয়েছে ২০২৫ সালে সৌদি আরবের GDP প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩%, যা তেল নির্ভরতার বাইরে শিল্প, পর্যটন ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সহায়ক ।
-
সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতিমধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে Masdar Project চালু করেছে।
-
কাতার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) রপ্তানিতে বিশ্বের শীর্ষে, যা ইউরোপীয় জ্বালানি নিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখছে।
বৈশ্বিক প্রভাব
-
জ্বালানি নিরাপত্তা: ইউরোপ, এশিয়া ও আমেরিকার অর্থনীতি মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার উপর নির্ভরশীল।
-
মার্কিন শেল অয়েল বনাম OPEC+: যুক্তরাষ্ট্র শেল অয়েল উৎপাদন বাড়ালেও, বাজার দখলে OPEC এখনও শক্তিশালী
-
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো: আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লেই আমদানি নির্ভর দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি ও জ্বালানি সংকট দেখা দেয়।