ঢাকার ভাটারা থানায় দায়ের হওয়া এক মামলায় বেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য—আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গোপনে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল একদল মানুষ। আর এই পুরো ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজন নারী—মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন।
পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি নিজেই সব স্বীকার করলেন—হ্যাঁ, ঘটনার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা আছে! শুনে আদালতের ভেতরে এক ধরনের চাপা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
বিষয়টা এখানেই থেমে নেই। আদালতের নথি ঘাঁটতে গিয়ে জানা গেল, সব শুরু হয়েছিল গত ৮ জুলাই। বসুন্ধরা এলাকার পাশে কে বি কনভেনশন সেন্টারে এক গোপন বৈঠক বসে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা এই বৈঠকে অংশ নেয় ৩০০ থেকে ৪০০ জন। কারা তারা? নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্য, আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী আর অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। বৈঠকের ভেতরে ছিল সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান, উত্তেজনা, আর এক অদ্ভুত পরিকল্পনার গন্ধ।
পরিকল্পনাটা ছিল ভয়ংকর। শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে তারা ঢাকার শাহবাগ দখল করবে। সারা দেশ থেকে লোক এনে রাজধানীতে বিশৃঙ্খলা ছড়াবে, মানুষকে আতঙ্কে ফেলবে, এবং শেষ পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক স্থিতি নষ্ট করবে।
এই ঘটনার তদন্তে বেরিয়ে আসে, প্রশিক্ষণের মূল হোতা মেজর সাদেকুল হক সাদেক। আর তাকে সহযোগিতা করছিলেন অনেকে—রাজনীতিক, প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা, এমনকি প্রাক্তন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও। সেনাবাহিনীও অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। সেনা সদর দফতর জানিয়েছে, সাদেক কর্মস্থল থেকে অনুপস্থিত ছিলেন, এবং এ সময় তিনি শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রশিক্ষণের আয়োজন করছিলেন।
তদন্তের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনী সাদেককে রাজধানীর উত্তরা থেকে আটক করে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে সামরিক আইনে ব্যবস্থা নিতে প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি, তিনি কেন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কিন্তু সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্যটা হলো—এই পরিকল্পনার তত্ত্বাবধান হচ্ছিল দেশের বাইরে থেকে! কলকাতায় বসে পুরো বিষয়টি নজরদারি করছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তার সঙ্গে ছিলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা এবং পুলিশের সাবেক কর্মকর্তারা।
শুধু তাই নয়, দিল্লি থেকেও সহযোগিতা মিলছিল। সেখান থেকে কৌশলগত সহায়তা দিচ্ছিলেন পলাতক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিবুর রহমান।
সব মিলিয়ে, এটি শুধু একটি মামলা নয়—এ যেন দেশের রাজনীতির অন্ধকার করিডরের এক ঝলক। যেখানে ক্ষমতা, ষড়যন্ত্র আর গোপন পরিকল্পনা মিলেমিশে তৈরি করছে এক রোমাঞ্চকর কিন্তু উদ্বেগজনক কাহিনি।
ঘটনার শেষ কোথায়, তা কেউ জানে না। তবে একটাই কথা পরিষ্কার—এই নাটকের পটভূমি যত উন্মোচিত হচ্ছে, ততই বেড়ে যাচ্ছে রহস্যের ঘনঘটা, আর জনমনে জন্ম নিচ্ছে একটাই প্রশ্ন—এবার আসল খেলাটা কিসের?