“চীন-ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক: ইতিহাস থেকে বর্তমানের কূটনৈতিক টানাবানা”

চীন-ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক
চীন-ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক

দক্ষিণ এশিয়ার ত্রিসংযোগ—চীন, ভারত ও বাংলাদেশ—শুধু ভৌগোলিক মিল নয়, রাজনৈতিক, কৌশলগত ও অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে একটি সুসংগত ও কখনো কখনো দ্বন্দ্বপূর্ণ সম্পর্কের ত্রিভুজ গঠন করে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

  • ভারতে মুক্তিযুদ্ধ ও ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বচুক্তি (১৯৭২):
    ১৯৭১ সালের যে আন্দোলন ও রক্তপর্ণে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, তাতে ভারত একে সমর্থন করেছিল গুরুত্বপূর্ণভাবে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ‘ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ, কোঅপারেশন অ্যান্ড পিস ট্রীটি’ স্বাক্ষরিত হয়—দুই দেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতীক।

  • চীন-বাংলাদেশের পুরাতন সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক বন্ধন:
    প্রাচীন কালের বাঙালির সঙ্গেই সাং উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক ও ধর্মীয় পথচলা ছিল চীনের সাথে—মুসলিম বিজয়পূর্ব, পাল‐বংশ এবং তাইবাতীয় বৌদ্ধসংস্কৃতির যাত্রায় উৎস। তবে আধুনিক যুগে রাজনৈতিকভাবে পারস্পরিক সহযোগিতা মূলত ১৯৫০-৬০ এর পর গড়ে উঠে।

বর্তমান প্রবণতা ও রাজনৈতিক পরিবর্তন

  • বাংলাদেশের দক্ষ কূটনীতি ও সম্পর্কের নতুন সমীকরণ:
    শেখ হাসিনার শাসনামলের “ভরত কেন্দ্রিক” নীতি থেকে জানুয়ারি-২০২৫ পরবর্তী সময়সহ শোনা গেছে বিদেশনীতি পুনর্বিন্যাসের সংকেত। চীনের সঙ্গে নতুন বন্ধন গড়ে তোলা হচ্ছে, যেমন ২০২৫-এর এপ্রিল মাসে চাংকার “Comprehensive Strategic Cooperative Partnership” ও বিনিয়োগ ও ঋণের প্রকল্পে অগ্রগতি।

  • সকলোমিলিত জনমতের ধারা:
    একটি সার্ভেতে জানানো হয়েছে—বাংলাদেশিদের মধ্যে ৭৬% মানুষ চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে ইতিবাচক দেখছেন; অন্যদিকে ভারতের প্রতি দৃশ্যমান কিছু নেগেটিভ মনোভাবও রয়েছে বিশেষ করে জলবণ্টন টাইপ ইস্যুতে।

  • নিবিড় সহযোগিতা ও প্রকল্প বিনির্মাণ:
    চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন সম্ভাবনা হিসেবে মংলা বন্দর আধুনিকায়ন, শিল্প অর্থনৈতিক জোন (China Industrial Economic Zone), প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগের অঙ্গীকার — সবই সাম্প্রতিক প্রকল্পের অংশ।

দ্বিধাবিভক্ত বিষয় ও দ্বন্দ্ব

  • নির্বাচন, নীতিনির্ধারণ ও ভারসাম্য:
    ভারত এখনো বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ neighbour ও ঐতিহাসিক বন্ধুরূপে বিবেচিত; বিশেষ করে ভারতীয় প্রস্তাবিত Teesta নদীর জলবণ্টন ইস্যু এবং সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যাগুলো এখনো খোলাখুলী রিজেন্ডে রয়েছে। ভারত এ বিষয়গুলোর সমাধান চায়, যেন সম্পর্কের বিশ্বাস ও ঐক্য বজায় থাকে।

  • ভুটান-ডোClaim/Doklam ধরনের সীমান্ত অস্থিতিশীলতার ছাপ:
    ডোকলামে ভারত-চীনের উত্তেজনা এবং “Siliguri Corridor” বা “Chicken’s Neck” নামক সেন্সিটিভ অঞ্চলের অপরিহার্যতা—বাংলাদেশের নিকটবর্তী এই অঞ্চলের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্ব সংযোগ তৈরি—উভয় দেশেই কৌশলগত বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ।

  • জলসম্পদ ও নদী বণ্টন:
    গঙ্গাসম্পর্কিত চুক্তি ১৯৯৬-তে হয়, কিন্তু তিব্বতের ওপর চীনের পানির প্রভাব এবং ব্রহ্মপুত্র/যারলুং ত্সাংপো নদীর উপর বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর ফলে downstream দেশগুলোর ওপর পানি প্রবাহ ও পরিবেশগত প্রভাবের উদ্বেগ রয়েছেই।

 সম্ভাবনা

  1. কৌশলগত বিপর্যয় নয়, কূটনৈতিক ভারসাম্য:
    বাংলাদেশ ভারতে নির্ভরতার পাশাপাশি চীন-সহ অন্য শক্তির সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছে, যা হয়তো নতুন “গুটি-গুটি কূটনীতি” বটে, কিন্তু অভ্যেস এখন উদার এবং সমন্বিত।

  2. অর্থনৈতিক পরিপক্কতা ও সহায়তার চাহিদা:
    প্রকল্পগুলোর ঋণ-শর্ত, পরিবেশগত প্রভাব, স্থানীয় মানুষ ও শ্রমিক অংশগ্রহণ—এই বিষয়গুলো ভালোভাবে ফোকাস পেলে সম্পর্ক শক্ত হলো কারন তারা টেকসই ও গ্রহণযোগ্য হবে।

  3. ভবিষ্যতের পরীক্ষাপথ:
    ২০২৬-এর নির্বাচন, ভারতের প্রতিক্রিয়া, চীনের প্রকল্প বাস্তবায়ন, পরিবেশ ও নদী সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ—এই সবই পাওয়া যাবে কাল এবং আগামী কয়েক বছরে দ্বন্দ্ব বা বন্ধনের অবস্থানের সিদ্ধান্ত।

আরও দেখুন

নাসা গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধে প্রশাসক নিয়োগ

নাসা গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতনাদি পরিশোধের লক্ষ্যে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *