৯/১১ হামলার ২৪ বছর: অজানা রহস্যও বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তন

“৯/১১ হামলা: ইতিহাস, প্রভাব ও আজকের বিশ্বকে দেওয়া শিক্ষা”
“৯/১১ হামলা: ইতিহাস, প্রভাব ও আজকের বিশ্বকে দেওয়া শিক্ষা”

আজ থেকে ঠিক ২৪ বছর আগে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত হয় ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। আল-কায়েদার নেতৃত্বে পরিচালিত এই হামলায় প্রাণ হারায় ২,৯৯৭ জন মানুষ, যা বিশ্ব রাজনীতির গতিপথই পরিবর্তন করে দেয়। এখনও পর্যন্ত ১,১০০ জন ভিকটিমের দেহাবশেষ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, যা এই ট্র্যাজেডির মাত্রা আরও গভীর করে তোলে।

 হামলার বিবরণ ও পরিকল্পনা

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে ১৯ জন ছিনতাইকারী চারটি বাণিজ্যিক বিমানের নিয়ন্ত্রণ নেয়। দুটি বিমান আঘাত হানে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ারে, তৃতীয় বিমানটি আঘাত করে ওয়াশিংটন ডিসির পেন্টাগনে এবং চতুর্থ বিমানটি যাত্রীদের প্রতিরোধের মুখে পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়।

  • টুইন টাওয়ারে আঘাত: স্থানীয় সময় সকাল ৮:৪৬ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১১ উত্তর টাওয়ারে এবং ৯:০৩ মিনিটে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১৭৫ দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত করে। উভয় ভবনই দুই ঘণ্টার মধ্যে ধসে পড়ে।

  • পেন্টাগনে আঘাত: আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৭৭ স্থানীয় সময় সকাল ৯:৩৭ মিনিটে পেন্টাগনের পশ্চিম অংশে আঘাত করে।

  • ইউনাইটেড ফ্লাইট ৯৩: এই বিমানটি স্থানীয় সময় সকাল ১০:০৩ মিনিটে পেনসিলভানিয়ার শ্যাঙ্কসভিলে বিধ্বস্ত হয়। ধারণা করা হয়, ছিনতাইকারীদের লক্ষ্য ছিল ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবন বা হোয়াইট হাউস।

 হামলাকারীদের পরিচয় ও উদ্দেশ্য

এই হামলার পেছনে ছিল ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বাধীন জিহাদি সংগঠন আল-কায়েদা। খালিদ শেখ মোহাম্মদকে এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। হামলাকারী ১৯ জন ছিনতাইকারীর মধ্যে ১৫ জন ছিলেন সৌদি নাগরিক, বাকিরা সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও লেবাননের।

ওসামা বিন লাদেন তার এক বক্তব্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই হামলার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন:

  • ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক সহযোগিতা

  • সৌদি আরবসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে মার্কিন সেনাবাহিনীর উপস্থিতি

  • ফিলিপাইন, চেচনিয়া ও কাশ্মীরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কার্যক্রমে মার্কিন সমর্থন

 ভিকটিম ও ক্ষয়ক্ষতি

এই হামলায় মোট ২,৯৯৭ জন নিহত হন, যার মধ্যে ১৯ জন হামলাকারী অন্তর্ভুক্ত নয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন:

  • ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে: ২,৬০৬ জন (আগুন ও ধসে পড়ার কারণে)

  • পেন্টাগনে: ১২৫ জন

  • চারটি বিমানে: ২৪৬ জন যাত্রী

নিহতদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন ২ বছর বয়সী ক্রিস্টিন লি হ্যানসন এবং সর্বজ্যেষ্ঠ ছিলেন ৮২ বছর বয়সী রবার্ট নর্টন। নিউইয়র্কের ৪৪১ জন অগ্নিনির্বাপক ও জরুরি কর্মীও এই হামলায় প্রাণ হারান।

 ভিকটিম শনাক্তকরণের চলমান প্রচেষ্টা

২০২৫ সালের September পর্যন্ত, ৯/১১ হামলার ২৪ বছর পরেও প্রায় ১,১০০ জন ভিকটিমের দেহাবশেষ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত মাত্র ১,৬০০ জনকে শনাক্ত করা গেছে।

বিজ্ঞানীরা উন্নত ডিএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিকটিমদের শনাক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০২৫ সালের আগস্ট মাসেই আধুনিক ডিএনএ প্রযুক্তির সাহায্যে আরও ৩ জন ভিকটিমের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। নিউইয়র্ক শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে এখনও নতুন দেহাবশেষ পাওয়া যাচ্ছে, যা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে।

বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব

৯/১১ হামলা বিশ্ব রাজনীতির গতিপথই পরিবর্তন করে দেয়:

  • আফগানিস্তানে যুদ্ধ: হামলার এক মাসেরও কম সময় পর প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ. বুশ আফগানিস্তানে আক্রমণ করেন আল-কায়েদাকে নিশ্চিহ্ন করতে এবং ওসামা বিন লাদেনকে ধরার জন্য।

  • ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু: ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন অভিযানে ওসামা বিন লাদেন নিহত হন।

  • নতুন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান: যুক্তরাষ্ট্রে গঠিত হয় ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এবং ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (টিএসএ)।

  • বিমান ভ্রমণের নিরাপত্তা: বিশ্বজুড়ে বিমান ভ্রমণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন করা হয়।

  • প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট: যুক্তরাষ্ট্রে পাস করা হয় বিতর্কিত প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট, যা নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে ক্ষমতা দেয়

 বিচার প্রক্রিয়া ও বর্তমান অবস্থা

৯/১১ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী খালিদ শেখ মোহাম্মদ ২০০৩ সালে পাকিস্তানে গ্রেপ্তার হন এবং এখনও গুয়ান্তানামো বে বন্দীশিবিরে আটক রয়েছেন। তিনি এখনও বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন ।

আল-কায়েদা এখনও সক্রিয় আছে, বিশেষ করে আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির দক্ষিণের দেশগুলোতে। আফগানিস্তানেও আল-কায়েদার সদস্য রয়েছে বলে জানা গেছে।

স্মৃতিসৌধ ও পুনর্নির্মাণ

হামলার স্থানগুলিতে স্মৃতিসৌধ ও নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে:

  • নিউইয়র্কে: ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের স্থানে নির্মিত হয়েছে ৯/১১ মেমোরিয়াল ও মিউজিয়াম এবং ১,৭৭৬ ফুট উঁচু ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার (“ফ্রিডম টাওয়ার”)।

  • পেন্টাগন: পেন্টাগনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ এক বছরের মধ্যে পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং ২০০২ সালের আগস্টে কর্মচারীরা অফিসে ফিরে যান।

 স্বাস্থ্য প্রভাব

হামলার পর থেকে thousands of মানুষ বিষাক্ত ধূলিকণার প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হেলথ প্রোগ্রামের ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ৯/১১ সংক্রান্ত ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৮ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষ এই কারণে প্রাণ হারিয়েছেন।

আরও দেখুন

জোহরান মামদানি

বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটিতে জোহরান মামদানির জনপ্রিয়তা: নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক জাগরণ!

America Bangla Report | নিউইয়র্ক, অক্টোবর ২০২৫ নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন Zohran Mamdani …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *