ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় একটা ছোট্ট চায়ের দোকানে বসে কৃষক রহিম উদ্ধার খবর শুনছেন। রেডিও থেকে আসছে খবর—বিএনপির অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন শীঘ্রই। রহিমের মুখে হাসি ফুটে ওঠে, কারণ তার মতো অনেকেই বিএনপিকে দেখেন আশার আলো হিসেব।
কিন্তু এই গল্পের শুরু লন্ডনের একটা শান্ত ফ্ল্যাটে, যেখানে তারেক রহমান জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের খবর পড়ছেন। ২০০৮ সাল থেকে এই নির্বাসনের জীবন—১৭ বছরের অপেক্ষা, যা তাকে দূর থেকে নেতৃত্ব দিতে বাধ্য করেছে। আজ, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, তার ফিরে আসার খবরে দেশের রাজনীতি উত্তেজিত। কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে: এই দূরত্ব কি বিএনপিকে ক্ষতি করছে?
গল্পটা ফিরে যায় জুলাইয়ের ঝড়ের পরে। আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপি উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ পায়। তারেক রহমান লন্ডন থেকেই নির্দেশ দেন—দলকে একত্রিত করুন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন। তার নেতৃত্বে দল ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর নির্বাচনের জন্য কৌশল গড়ে তোলে। প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুসারে, তারেকের পরামর্শে বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে নির্বাচনী চুক্তি করে, যা দলকে শক্তিশালী করে।
তিনি মিটিং করেন ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে, যা বিএনপির আন্তর্জাতিক মর্যাদা বাড়ায়। তার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীর বলেছেন, “তারেকের নেতৃত্বে বিএনপির বিদেশনীতি কোনো এক দেশের উপর নির্ভর করবে না, জাতীয় স্বার্থ প্রথম।” এই দূরত্বের সুবিধা—তারেক নিরাপদে কৌশল আঁকেন, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিএনপির কণ্ঠস্বর তুলে ধরেন। আল জাজিরার একটি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, তার লন্ডন-ভিত্তিক নেতৃত্ব দলকে বৈশ্বিক সমর্থন আকর্ষণ করেছে, যা স্থানীয় চাপ থেকে রক্ষা করে।
কিন্তু এই গল্পের অন্ধকার অংশও আছে। দূরত্বটা কি দলের ক্ষতি করছে? হ্যাঁ, করছে—আংশিকভাবে। বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সাম্প্রতিক এক আলোচনায় বলেছেন, “তারেকের ফিরে আসা দলকে ঐক্যবদ্ধ করবে, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে।” কেন? কারণ তার অনুপস্থিতিতে দলের ভিত্তিতে ফাটল ধরেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থকরা বলছেন, তারেকের দূরত্বে দলের নেতারা স্থানীয় স্তরে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। এক্স-এ এক পোস্টে লেখা হয়েছে, “তারেকের নির্বাসন দলকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে—দূরের নেতৃত্ব অনুপ্রেরণা দিতে পারে না।” ডেইলি স্টারের বিশ্লেষণে উল্লেখ আছে, বিএনপির ৪৭তম বার্ষিকীতে দলকে ‘সম্ভাবনা ও বিপদের মাঝে’ দেখা যাচ্ছে, যেখানে তারেকের অনুপস্থিতি অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।
কর্মীরা হতাশ—তারেকের ফিরে না আসায় তারা অনুপ্রাণিত হয় না, বিশেষ করে যুবকরা যারা তার সরাসরি নেতৃত্ব চায়। পুরনো মামলাগুলোর ছায়া এখনো রয়েছে, যদিও ২০২৫-এর মে মাসে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এই দূরত্ব দলের ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে—লোকে ভাবে, নেতা দেশ ছাড়া কীভাবে দেশ চালাবে?
তবু, এই গল্পের মূলে আছে আশা। তারেক নিজে বলেছেন, “দুর্নীতি এড়িয়ে সাহসের সঙ্গে কাজ করব, যাতে জনগণের ভালোবাসা ফিরে আসে।” তার ফেরতের অপেক্ষায় দল পুনর্গঠিত হচ্ছে—নতুন নেতৃত্ব গড়ে, যা কৃষক রহিমের মতো সাধারণ মানুষকে আশা দেয় যে রাজনীতি শুধু শহুরে নয়, গ্রামেরও।
শহুরে ছাত্ররা বুঝবে, দূরত্ব শেখায় ধৈর্য, কিন্তু ফিরে আসা আনে শক্তি। বিবিসি বাংলার মতো বিশ্লেষকরা বলছেন, তার ফেরত বিএনপিকে নতুন মাত্রা দেবে, জামায়াতের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াবে। এই নির্বাসনের যাত্রা শেষ হলে, বিএনপি শুধু দল নয়—দেশের আশার প্রতীক হবে। রহিম চায়ের কাপ তুলে হাসেন, কারণ গল্পটা এখানে শেষ হয় না—এটা শুরু হয় নতুন সকালে।