২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন — ক্লাস বর্জন, রোড ব্লক, সিট-ইন ও সমাবেশ — বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একটি মাইলফলক হয়ে থেকে গেল। সেই আন্দোলন শুধু পুরনো দাবিগুলোর পুনরুদ্ধার ছিল না; এটি ছাত্র-ছাত্রীদের রাজনৈতিক সচেতনতা, ক্যাম্পাস নিরাপত্তা, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দল-রোলের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রশ্ন ছুঁড়েছে। ২০২৫ সালের ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) ও সাম্প্রতিক জাকসু (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থীবান্ধব) নির্বাচনের পটভূমিতে ২০২৪ থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলোকে পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
২০২৪ সালের গরমে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে এবং বড় আকারে প্রতিবাদ চালায়; তাঁদের আন্দোলন সামাজিক অবিচার, ভারসাম্যহীন নীতি ও ক্যাম্পাস নিরাপত্তার দুর্বলতাকে লক্ষ্য করে। আন্দোলনটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং তা কেবল শিক্ষার্থীদের ট্রানজিটরি ক্ষোভ ছিল না — বরং একটি সংগঠিত রাজনৈতিক এবং সামাজিক দাবি হিসেবে দাঁড়ায়। এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের ঐক্য, দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য দাবি তুলতে পারার ক্ষমতা এবং গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাত্ক্ষণিক প্রভাব তৈরির ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিল।
ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে গণনা প্রক্রিয়া, ভোট কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক উঠে এসেছে; ভোটের ফলাফল ও কেন্দ্রগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রকাশ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা গেছে। একই সময় জাকসুর নির্বাচন কার্যক্রমের কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দিন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে—এইসব ঘটনাই দেখায় যে, নির্বাচন আয়োজন ও পরপরবর্তী নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও পুরোপুরি নিখুঁত নয়।
আরও উদ্বেগজনক হলো—ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর ঘটনার উদাহরণ; সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের হুমকির মতো ঘটনাও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে, যা ক্যাম্পাস নিরাপত্তা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন তুলেছে। এমন ঘটনার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষক বরাবরই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
চব্বিশ থেকে শেখার কয়েকটি মূল পয়েন্ট
২০২৪ দেখিয়েছে শিক্ষার্থীরা দ্রুত ঐক্যবদ্ধ হতে পারে এবং স্বল্পসময়ে বড় দাবি আনতে সক্ষম—তাই প্রশাসন ও নীতিনির্ধারকরা সেই শক্তিকে উপেক্ষা করতে পারবে না; বরং সেটাকে অংশগ্রহণমূলক ডায়ালগ ও নিয়মিত আলোচনা মাধ্যমে আইনি ও নীতিগত কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
ভোট আয়োজন, ভোট গণনা ও নির্বাচনী আচরণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ত্রুটি শিক্ষার্থীদের আস্থা ক্ষুণ্ণ করে। স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সময়মত তথ্য দেয়ার প্রক্রিয়া তৈরি না হলে সহস্র jonge সংঘর্ষ এবং বিভ্রান্তি দেখা দেবে। সভ্য নির্বাচন-পরিচালনার জন্য স্বাধীন পর্যবেক্ষণব্যবস্থা ও দ্রুত আপিল-সুযোগ প্রয়োজন।
গুরুতর হুমকি—যেমন ধর্ষণের হুমকি বা তা-সংক্রান্ত অভিযোগ—তৎক্ষণাৎ তদন্ত, দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন দাবি করে। নিরাপত্তা কেবল ক্যাম্পাস পুলিশ বা রাস্তায় পুলিশ বাড়ানো নয়; এটি একটি সমন্বিত পদ্ধতি—রিপোর্টিং পদ্ধতি, মনোবৈজ্ঞানিক সহায়তা, নারী নিরাপত্তা পরিকল্পনা এবং ছাত্র-শিক্ষক-পরিচালনার মধ্যে প্রস্তুত যোগাযোগ চ্যানেল।
ভোট ও ছাত্র রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলের অনুপ্রবেশ ও প্রভাব কেমন ভূমিকা রাখে—এটি পরিষ্কার করে দিতে হবে। বাহ্যিক রাজনৈতিক আগ্রাসন বা সহিংস অভিব্যক্তি রোধে বিশ্ববিদ্যালয়দের এক যুগ্ম নীতিমালা প্রয়োজন, যাতে ছাত্রসংগঠনগুলোর স্বায়ত্তশাসন রক্ষা করে অরাজকতা রোধ করা যায়।
২০২৪-এর পরে শিক্ষক সমাজ এবং বুদ্ধিজীবীরা প্রকাশ্য সমর্থন ও সমালোচনার মাধ্যমে আন্দোলনকে নৈতিক ও বৌদ্ধিক ম্যানডেট দিয়েছেন—এর ফলে শিক্ষাঙ্গনের স্বচ্ছতা ও আর্থ-সামাজিক প্রশ্নগুলো আলোচিত হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সংলাপে ভুমিকা জোরালো করা উচিত।
কী করা উচিত—
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বচ্ছ ও বহিরাগত পর্যবেক্ষকদের সমন্বয়ে নির্বাচন তত্ত্বাবধান।
-
যৌন হুমকি বা সহিংসতার অভিযোগে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত ও অস্থায়ী পদক্ষেপ।
-
প্রশাসন—শিক্ষক—ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়মিত মতবিনিময় মিটিং, যাতে নগর রাজনীতি ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়তে না পারে।
-
মানসিক স্বাস্থ্যের সেবা, জরুরি হেল্পলাইন ও নিরাপত্তা শিক্ষা কর্মশালা।
-
ভোটসংক্রান্ত ও জরুরি তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল চ্যানেল থেকে সময়মত ও সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করা।
২০২৪-এ শিক্ষার্থীদের ঐক্য ও তৎপরতা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল—কিন্তু সেই আন্দোলন যদি প্রতিষ্ঠানগত পরিবর্তনে রূপান্তরিত না হয়, তা শুধুই এককালীন উত্তালতা হিসেবে শেষ হবে। ২০২৫ সালের ডাকসু ও জাকসু-সংক্রান্ত ঘটনা দেখায়—অভ্যন্তরীণ সংস্কারের প্রয়োজন এখনও টিকে আছে। বাস্তব পরিবর্তন আনার জন্য দরকার প্রশাসনিক সততা, স্বাধীন তদারকি, এবং সবচেয়ে বড় কথা—শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অংশীদারিত্বমূলক সিদ্ধান্তগ্রহণ।
আমেরিকা বাংলা | আমেরিকার বাংলা খবর, কমিউনিটি ও বিশ্ব সংবাদ আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সর্বশেষ বাংলা খবর, কমিউনিটি সংবাদ ও বিশ্ব আপডেট।