জেন-জি বিপ্লবে আরেক দেশে সরকারের পতন

জেন-জি বিপ্লবে আরেক দেশে সরকারের পতন
জেন-জি বিপ্লবে আরেক দেশে সরকারের পতন

গত কয়েক দিনে মাদাগাস্কারের রাজধানী অ্যান্টানানারিও সহ কয়েকটি শহরে ছড়িয়ে পড়া জেন-জি (Gen Z) নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভকে থামাতে না পেরে দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা তাঁর মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন—এক প্রত্যাশিত হলেও তা সমাসিক সংকট শানিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিক্ষোভগুলো শুরু হয়েছিল দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ এবং পানির ক্রমাগত কাটছাঁট ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে; দ্রুতই তা রাজনৈতিক আকার ধারণ করে এবং সরকারকে নড়াতে বাধ্য করেছে।

বিক্ষোভের সূচনা ও দাবি

বিক্ষোভগুলোর সূত্রপাত হয় রাজধানীর কঠোর বিদ্যুৎ ব্ল্যাক-আউট এবং গুরুত্বপূর্ণ পানীয় জলের ঘাটতির প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে। চলমান আয়ুষ্মান বিষণ্ণতার মধ্যে, তরুণরা সামাজিক মাধ্যামে সংগঠিত হয়ে রাস্তায় নামে—“জেন-জি” নামটির নীচে তাদের অভিযোগ ছিল বাইরে থেকে নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি ছাড়া নাগরিকদের মৌলিক সেবা নষ্ট হচ্ছে এবং সরকার দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা শুধুমাত্র বিদ্যুৎ ও পানি প্রত্যাহারের অবসান নয়, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচন দাবি করছে।

বিক্ষোভের ধরন ও গতিবিধি

বিক্ষোভগুলো বড় অংশে অনলাইন মাধ্যমে সংগঠিত—টিকটক, টুইটার ও ডিসকর্ডের মতো প্ল্যাটফর্মে দ্রুত ছড়িয়েছে। অনেক জায়গায় তরুণেরা শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় নামলেও কিছু বিক্ষোভ এলাকায় নাশকতা, লুটপাট ও দাঙ্গা-সদৃশ ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে; নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার-গ্যাস, রাবার বুলেট ও, কিছু ক্ষেত্রে, লাইভ অ্যামিউনিশন ব্যবহার করেছে বলে দাবি করেছে জাতিসংঘ। এই সহিংসতা কমপক্ষে ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহতের রিপোর্ট করেছে জাতিসংঘ; সরকারি সংখ্যা ভিন্ন তাৎপর্য দেখিয়েছে।

রাষ্ট্রপতির প্রতিশ্রুতি এবং মন্ত্রিসভার বিলুপ্তি

চাপ বেড়ে গেলে রাষ্ট্রপতি রাজোয়েলিনা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগদানরত অবস্থায়ই দেশে সরকার বদলের ঘোষণা দেন—বিশেষ করে শক্তি ও জলের মন্ত্রীকে বরখাস্ত করে মন্ত্রিসভা বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নেন। সরকারের এই পদক্ষেপকে অনেক বিশ্লেষক আপাতত তাত্ক্ষণিক তৃষ্ণা নিবারণ হিসেবে দেখলেও, বিক্ষোভের নেতারা এটিকে যথেষ্ট মনে করেননি; তারা রাষ্ট্রপতির পুরো ক্ষমতা হস্তান্তর ও স্পষ্ট রাজনৈতিক পরিবর্তন দাবি করে রাস্তায় ফিরে এসেছে।

কেন এই বিক্ষোভ ‘জেন-জি’ তত্ত্বের অংশ?

মাদাগাস্কার বিক্ষোভকে কেবল স্থানীয় সমস্যা হিসেবে দেখা ঠিক হবে না—সম্প্রতি কেনিয়া, নেপাল ও মরক্কোতে দেখা অনুকূল তরুণ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এই তরুণশক্তিই অনলাইন-ভিত্তিক, নেতা-বিহীন, দ্রুত সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তুলছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা, বেকারত্ব ও মৌলিক পরিষেবার অভাব এসব আন্দোলনের সাধারণ দাবি হিসেবে উঠে এসেছে; মাদাগাস্কারের উদাহরণেও এটাই স্পষ্ট। এই তরুণ আন্দোলনগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে থেকে দাবি তোলার ক্ষমতা রাখে—এবং দ্রুত আন্দোলনকে জাতীয় ইস্যু বানিয়ে দেয়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকারের উদ্বেগ

জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তারা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচলিত কড়া তৎপরতাকে নিন্দা করে বলেছেন—অনেক নিহতই নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস প্রতিক্রিয়ায় নিহত বলে মন্তব্য করা হয়েছে; তবে মিশ্র তথ্য ও বিবেচনার কারণে ঘটনার প্রকৃত চিত্র নির্ধারণে জটিলতা রয়েছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো দ্রুত তদন্ত ও শান্তি আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে অঞ্চলীয় নেতারা অনুরোধ করেছেন দ্রুত রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করতে।

রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পথ

মন্ত্রিসভা বিলুপ্তি অল্পসময়ের জন্য পরিস্থিতি শীতল করতে পারে, কিন্তু মূল সমস্যা দূর করতে প্রকৃত রাজনৈতিক পুনর্গঠন প্রয়োজন। অভূতপূর্ব বেকারত্ব, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ক্ষত — এসব যদি সমাধান না করা হয়, তরুণরা ফের রাস্তায় নামবে বলে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিরোধীরা এই পরিস্থিতিকে সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে; অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করে দ্রুত বাস্তব উদ্যোগ না নিলে সংকট বাড়তে পারে।

 কনফ্লিক্ট ও curfew

বিক্ষোভ চলাকালীন কিছু শহরে ব্যাংক ও দোকানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে; ফলশ্রুতিতে অবশ্যই সাধারণ নাগরিকদের দুর্ভোগ বেড়েছে। অটোনানারিওতে রাত্রীকালীন কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে—নগরীর সাধারণ জীবন ক্রমশ থমকে গেছে। নিরাপত্তা জোরদার হওয়ার পরও সড়কে উত্তেজনা আছে এবং বেসরকারি স্কুল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার খবর আছে।

কেন মাদাগাস্কার ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ

মাদাগাস্কারের ঘটনাটি ছোট অভ্যন্তরীণ সংকট হলেও তার সমান্তরালে বিশ্ববাজারে ও উপকূলীয় অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মানবিক ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। তরুণদের অনলাইন-সংগঠন ও দ্রুত আন্দোলন ক্ষমতার একটি নতুন নমুনা হিসেবে এখানে ধরা দিল—যা অন্যান্য দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশেও প্রবল ঝুঁকি তৈরির সম্ভাবনা রাখে। একই সঙ্গে, যদি সরকার ফর্মাল রাজনৈতিক চ্যানেলের পরিবর্তে কড়া নিরাপত্তা নীতিই বেছে নেয়, তা দীর্ঘমেয়াদে জনগণের আস্থা ভেঙে দিতে পারে।

আরও দেখুন

‘টার্গেট তেহরান’: ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানে মানবিক বিপর্যয়

‘টার্গেট তেহরান’: ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানে মানবিক বিপর্যয়

মুহাম্মদ সোহেল রানাঃ মার্কিন অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান Fault Lines তাদের নতুন পর্ব ‘Target Tehran’-এ ইরানে ইসরায়েল …