
মুহাম্মদ সোহেল রানা, আমেরিকা বাংলা ডেস্কঃ পশ্চিম তীরে রেকর্ড সংখ্যক বসতি স্থাপনকারীর হামলা—ইসরায়েলের অভ্যন্তরে গভীর বিভাজন সৃষ্টি পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা চালানো সহিংসতার রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধিতে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও সামাজিক স্তরে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস (OCHA) জানিয়েছে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে পশ্চিম তীরে ২৬০টিরও বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা প্রতিদিন গড়ে আটটিরও বেশি। এই হামলাগুলোর লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনি নাগরিক, তাদের ঘরবাড়ি, যানবাহন এবং কৃষিজমি। বিশেষ করে জলপাই সংগ্রহ মৌসুমে হামলার সংখ্যা বেড়েছে। বেইতা অঞ্চলে একটি হামলায় বসতি স্থাপনকারীরা গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং সাংবাদিকসহ কর্মীদের মারধর করে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার এই সহিংসতাকে “জঘন্য” বলে অভিহিত করেছেন এবং ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি বাহিনীর অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, সেনাবাহিনীর কৌশল মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা গাজায় “মানবিক বিপর্যয়” ঘোষণা করেছেন। গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘর্ষে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিবিসি-র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইসরায়েলি বাহিনী হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে গিয়ে ব্যাপক বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৩ কারনে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে মতবিরোধ , সহিংসতা ও ইসরায়েলের অভ্যন্তরে গভীর বিভাজন সৃষ্টি করেছে:
• নিরাপত্তা বাহিনী বনাম চরমপন্থী বসতি স্থাপনকারী: সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, কিছু বসতি স্থাপনকারী দল রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে দায়মুক্তির সুবিধা নিচ্ছে। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
• রাজনৈতিক বিভাজন: মধ্যপন্থী ও বামপন্থী নেতারা কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন, অন্যদিকে ডানপন্থী দলগুলো বসতি স্থাপনকারীদের “ইহুদি ঐতিহ্যের রক্ষক” হিসেবে তুলে ধরছে।
• মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবাদ: ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসরায়েলকে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলেছে। এই অস্থিরতা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনার ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় বিমান হামলা, স্থল অভিযান এবং অবরোধের মাধ্যমে হামাসকে লক্ষ্যবস্তু করছে। তবে এই অভিযানে হাজার হাজার সাধারণ ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত ও আহত হয়েছে, যার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। হাসপাতাল, স্কুল ও আশ্রয়কেন্দ্রও হামলার শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে—চরমপন্থী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, নাকি অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক কাঠামো ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরও দুর্বল করবে। আগামী কয়েক সপ্তাহে এই সংকটের গতিপথ নির্ধারিত হতে পারে।
আমেরিকা বাংলা | আমেরিকার বাংলা খবর, কমিউনিটি ও বিশ্ব সংবাদ আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সর্বশেষ বাংলা খবর, কমিউনিটি সংবাদ ও বিশ্ব আপডেট।