আইনজীবী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ ‘বিয়ের প্রলোভনে ধ*র্ষ*ণ’

প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ: আইনজীবী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে
প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ: আইনজীবী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে

মুহাম্মদ সোহেল রানাঃ ঢাকার একজন নারী আইনজীবী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, শিশির মনির তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। পরে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেন।

অভিযোগকারী নারীর বক্তব্য অনুযায়ী অভিযোগের মূল বিষয়, শিশির মনির প্রথমে তাকে বিয়ের আশ্বাস দেন। সেই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু পরে তিনি বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। এতে নারীটি মনে করেন, এটি আসলে ‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’।

সাদিয়া আক্তার রাফি (প্রিয়সী) নামের এক তরুণী এই বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। লিখিত অভিযোগ ও ভিডিও বার্তা থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে হাইকোর্ট নির্বাচন প্রচারণার সময় আইনজীবী শিশির মনিরের সঙ্গে ওই নারীর পরিচয় হয়। মুঠোফোনে যোগাযোগের সূত্র ধরে ২০১৮ সালে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভুক্তভোগীর দাবি, সম্পর্কের একপর্যায়ে ২০১৯ সাল থেকে শিশির মনির তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।

প্রধান বিচারপতির কাছে দেওয়া অভিযোগে ভুক্তভোগী উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে শিশির মনির তাকে তার ধানমন্ডির চেম্বারে ডেকে নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমবার ধর্ষণ করেন। পরবর্তীতে ওই নারী জানতে পারেন শিশির মনির বিবাহিত। এ বিষয়ে প্রশ্ন তুললে শিশির জানান, স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো নয় এবং স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে তিনি ভুক্তভোগীকে বিয়ে করবেন। এমন আশ্বাস দিয়ে তিনি নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যান।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ গত ৮ নভেম্বর ২০২৩, সন্ধ্যা ৬টার দিকে ধানমন্ডির চেম্বারে তাকে আবারও জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়। সেদিন বিয়ের জন্য চাপ দিলে শিশির মনির ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে তার ক্লার্ক নয়নের মাধ্যমে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাকে চেম্বার থেকে বের করে দেওয়া হয়।এছাড়া ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশির মনির তাকে টাকার বিনিময়ে আপস করার এবং দূরে চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে ভুক্তভোগী নারী সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “সে আমাকে বলছে টাকা নিয়ে আপস হও। কিন্তু আমি সেটা নিতে চাচ্ছি না।”

বাংলাদেশে ‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’ একটি বিতর্কিত বিষয়। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি বিয়ের প্রতিশ্রুতি মিথ্যা হয় এবং সেই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়, তবে তা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হতে পারে। তবে আদালতকে প্রমাণ করতে হবে যে প্রতিশ্রুতিটি ছিল প্রতারণামূলক এবং উদ্দেশ্য ছিল ভুক্তভোগীকে শারীরিক সম্পর্কে প্রলুব্ধ করা।

বিষয়টি আইনজীবী মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের অভিযোগ বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো আইনজীবী সমাজের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অন্যদিকে, নারীর অধিকারকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের মামলা নারীদের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ খুলে দিতে পারে।

অভিযোগটি এখন প্রধান বিচারপতির দপ্তরে রয়েছে। তিনি চাইলে বিষয়টি তদন্তের জন্য বার কাউন্সিল বা অন্য কোনো সংস্থাকে নির্দেশ দিতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মামলা ভবিষ্যতে ‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’ সংক্রান্ত আইনি ব্যাখ্যা ও নজির তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এই ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তিগত অভিযোগ নয়, বরং বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে: বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে তা কি ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে? আদালতের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে এ ধরনের মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

আরও দেখুন

জেলেনস্কি বললেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা কঠিন হলেও ফলপ্রসূ

“যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা কঠিন হলেও ফলপ্রসূ”-জেলেনস্কি

মুহাম্মদ সোহেল রানাঃ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চলমান প্রসঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান …