দিল্লিতে হাসিনার বাসায় ‘তিন এজেন্ডা’ নিয়ে গোপন বৈঠক

দিল্লিতে হাসিনার বাসায় ‘তিন এজেন্ডা’ নিয়ে গোপন বৈঠক

আমেরিকা বাংলা ডেস্ক – বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে যেন এক অন্ধকার মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এখনও অস্থিরতার জাল বুনতে ব্যস্ত। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ক্ষমতায় অবস্থান করে জনগণের উপর অত্যাচার চালিয়ে যাওয়া এই দলের পতনের পরও তারা প্রতিবেশী ভারতের রাজধানী দিল্লিকে তাদের গোপন কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করছে। সেখান থেকেই দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর নীলনকশা রচনা করা হচ্ছে, যা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আমেরিকাবাংলা.কম-এর এই প্রতিবেদনে আমরা এই চক্রান্তের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরব, যাতে প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশের এই সংকটের গভীরতা বুঝতে পারেন এবং তাদের মাতৃভূমির প্রতি দায়বদ্ধতা আরও দৃঢ় হয়।

দিল্লির অভিজাত লুটিয়েন্স জোনে ভারত সরকারের সুরক্ষিত একটি বাংলোতে লুকিয়ে থাকা শেখ হাসিনা এবং তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এখন দলের ‘ওয়ার রুম’-এর মতো ব্যবহার করছেন এই আস্তানাকে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এখানে নিয়মিত চিকিৎসক ও নার্সের সেবা পাওয়া যায়, এমনকি জরুরি অবস্থায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আসেন। পাশাপাশি, একজন সাবেক বাংলাদেশি হাইকমিশনার, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের পছন্দ একজন আইনজীবী এবং দিল্লি প্রেস ক্লাবের একজন সাংবাদিকও সহযোগিতা করছেন। সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন-উত্তরও এই দলই দেখভাল করে। কিন্তু এই ‘রুম’-এর মধ্যেই গত ৪ নভেম্বর একটি গোপন কথোপকথনের ঘটনা ঘটে, যা দলের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা প্রকাশ করে। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল মাকে বর্তমান পরিস্থিতিতে চুপ থাকার পরামর্শ দিলে শেখ হাসিনা ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেন, বলে ঢাকার নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। এই ঘটনা দলের কৌশলগত দিকভ্রষ্টতার ইঙ্গিত দেয়, যা তাদের পরিকল্পনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এদিকে, দেশের রাজধানী ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকায় আওয়ামী লীগের নাশকতার পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলার রায় ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ ১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে তৈরি এই ষড়যন্ত্রের খবর পাওয়া যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে অন্তত ৩৭ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে, যাদের কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই গ্রেপ্তারগুলো শুধুমাত্র একটি ঘটনা নয়, বরং দলের বিদেশ থেকে পরিচালিত কারসাজির প্রমাণ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অনেকেই দিল্লির নির্দেশে কাজ করছিলেন বলে জানা গেছে। এই ঘটনা বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরও সতর্ক করে তুলেছে, যা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

আরও গভীরে গিয়ে দেখা যায়, গত ১১ অক্টোবর দিল্লির এই গোপন বাংলোতে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলা এই চার ঘণ্টার বৈঠকে অংশ নেন আওয়ামী লীগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। এদের মধ্যে ছিলেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আকবর হোসেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়া সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, কক্সবাজারের সাবেক এমপি সাইমুম সরোয়ার কমল, ফরিদপুরের সাজেদা চৌধুরীর পুত্র আয়মন আকবর চৌধুরী বাবলু এবং টাঙ্গাইলের সাবেক এমপি ছোট মনিরও উপস্থিতি ছিল। বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল তিনটি: প্রথমত, সম্প্রতি ‘গুম প্রসিকিউশন চার্জে’ দলের শীর্ষ নেতৃত্বসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তির পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ। দ্বিতীয়ত, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে ইচ্ছুক ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন জোরদার করা। তৃতীয়ত, দলকে সংগঠিত করা, তৃণমূলপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ বাড়ানো এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত। এই বৈঠকের ফলশ্রুতি হিসেবেই ১৩ নভেম্বরের লকডাউন প্রোগ্রাম ঘোষণা করা হয়, যা এখন পুলিশের কঠোর নজরদারিতে রুখে দাঁড়িয়েছে।

এই ঘটনাপ্রবাহ প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ প্রবাসী, যারা রেমিট্যান্সের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে সমর্থন করছেন, তারা এখন দেশের স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বিগ্ন। আওয়ামী লীগের এই চক্রান্ত দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলতে পারে। প্রবাসী কমিউনিটির সংগঠনগুলো, যেমন আমেরিকান বাংলাদেশী ফেডারেশন, ইতিমধ্যে এই ষড়যন্ত্রের নিন্দা করে দেশের শান্তি-স্থিতিশীলতার পক্ষে একত্রিত হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসও প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা জারি করেছে, যাতে তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই প্রচারণায় না জড়ান।

এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের রাজনীতিকে এক নতুন মোড় নিয়ে আসছে। শেখ হাসিনার দিল্লি-কেন্দ্রিক কারসাজি যদি সফল হয়, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিপন্ন হবে। কিন্তু জনগণের ঐক্য এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতা এই চক্রান্তকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। প্রবাসী ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে বলা যায়, এই সংকটের মধ্যেও আশার আলো জ্বলছে—দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় আপনাদের সমর্থন অপরিহার্য। আসুন, আমরা সকলে মিলে মাতৃভূমির শান্তির জন্য প্রার্থনা করি এবং সতর্কতার সাথে এগিয়ে যাই। বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত এই অন্ধকারকে অতিক্রম করবে, যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি।

(শব্দ সংখ্যা: ৬৫২)

আরও দেখুন

তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণা

তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণা

মুহাম্মদ সোহেল রানাঃ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন। …