দুঃসংবাদ যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য

UK illegal immigration
UK illegal immigration

মুহাম্মদ সোহেল রানা, আমেরিকা বাংলা ডেস্কঃ যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নতুন নীতিমালায় স্থায়ী বসবাসের জন্য অপেক্ষার সময় বাড়ানোর পাশাপাশি আশ্রয় সুবিধাও সীমিত করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্য সরকার আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় নীতিগত পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। নতুন পরিকল্পনায় স্থায়ী বসবাসের জন্য অপেক্ষার সময় ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ২০ বছর করা হয়েছে। পাশাপাশি আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য দেওয়া আবাসন ও আর্থিক সহায়তা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কী পরিবর্তন আসছে?
• স্থায়ী বসবাসে দীর্ঘ অপেক্ষা: এখন থেকে আশ্রয়প্রার্থীরা ২০ বছর পর স্থায়ী বসবাসের আবেদন করতে পারবেন। আগে এই সময়সীমা ছিল মাত্র ৫ বছর।
• অস্থায়ী আশ্রয় অনুমোদন: আশ্রয়প্রার্থীদের দেওয়া রিফিউজি স্ট্যাটাস হবে অস্থায়ী, যা প্রতি ২.৫ বছর পর পর পর্যালোচনা করা হবে। যদি তাদের নিজ দেশকে নিরাপদ ঘোষণা করা হয়, তাহলে তাদের ফেরত পাঠানো হবে।
• সহায়তা বাতিল: আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আবাসন, সাপ্তাহিক ভাতা ও অন্যান্য সহায়তা বাতিল করা হবে। বিশেষ করে যাদের সম্পদ আছে, যারা আইন লঙ্ঘন করেন বা অবৈধভাবে কাজ করেন, তাদের সহায়তা বন্ধ হবে।
• ডেনমার্ক মডেল অনুসরণ: নতুন নীতিমালা ডেনমার্কের কঠোর অভিবাসন ব্যবস্থার আদলে তৈরি হচ্ছে।
• ‘সেফ রুট’ চালু: যুদ্ধ ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের জন্য নিরাপদ ও বৈধ পথ তৈরি করা হবে।
• সহায়তা সীমিতকরণ: অবৈধভাবে আগতদের জন্য আবাসন ও ভাতা সুবিধা বাতিলের পরিকল্পনা রয়েছে।

হোম সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদ জানিয়েছেন, এই নীতিমালা “মানুষকে বার্তা দেওয়ার জন্য তৈরি: দয়া করে আসবেন না”। তিনি বলেন, “আমরা ডেনমার্কের মতো কঠোর মডেল অনুসরণ করছি, যাতে ছোট নৌকায় করে অবৈধভাবে আসা বন্ধ হয়”। “আমি দেখতে পাচ্ছি—আমার সহকর্মীরাও দেখছেন—অবৈধ অভিবাসন আমাদের দেশকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে,” বলেন মাহমুদ। তিনি জানান, বর্তমান আশ্রয়প্রার্থী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং এটি সংস্কার না করলে সমাজে বিভাজন আরও বাড়বে।

অবৈধ অভিবাসন ব্রিটেনকে “ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে” এবং এই সংকট মোকাবিলায় আশ্রয়প্রার্থী ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। তিনি এই উদ্যোগকে “নৈতিক মিশন” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “আমাদের দায়িত্ব দেশের ঐক্য ফিরিয়ে আনা”। অবৈধ অভিবাসন দেশের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে এবং এটি ঠেকাতে ‘ভাঙা’ আশ্রয়প্রার্থী ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। তিনি এই উদ্যোগকে একটি “নৈতিক দায়িত্ব” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ:
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই পদক্ষেপকে “অমানবিক” ও “আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরিপন্থী” বলে অভিহিত করেছে। তারা আশঙ্কা করছে, এই নীতিমালা আশ্রয়প্রার্থীদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার হুমকির মুখে ফেলবে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:
লেবার সরকার এই কঠোর অবস্থান নিয়েছে পপুলিস্ট রিফর্ম ইউকে পার্টির জনপ্রিয়তা ঠেকাতে। অভিবাসন ইস্যুতে জনমতের চাপের মুখে সরকার নীতিমালা আরও কঠোর করছে। এই সংস্কারকে বলা হচ্ছে আধুনিক সময়ের সবচেয়ে বড় আশ্রয় নীতির পরিবর্তন।

বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া
• মাহমুদ বলেন, “আমি কোনো শত্রুভাবাপন্ন পরিবেশ তৈরি করছি না। বরং এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব।”
• স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা যদি এটি সমাধান না করি, তাহলে আমাদের সমাজ আরও বিভক্ত হয়ে পড়বে”।
• কিছু মহল থেকে এই পদক্ষেপকে “বর্ণবাদী” বলেও সমালোচনা করা হয়েছে, তবে মাহমুদ তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এই নীতিমালার ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু অভিবাসন প্রত্যাশী নাগরিকের জন্য যুক্তরাজ্যে আশ্রয় পাওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

আরও দেখুন

জেলেনস্কি বললেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা কঠিন হলেও ফলপ্রসূ

“যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা কঠিন হলেও ফলপ্রসূ”-জেলেনস্কি

মুহাম্মদ সোহেল রানাঃ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চলমান প্রসঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান …