আমেরিকায় বাংলাদেশীদের জন্য নতুন হেলথ ইন্স্যুরেন্স স্কিম!

আমেরিকা বাংলা ডেস্ক – আমেরিকার ব্যস্ত জীবনের মাঝে, যেখানে প্রতিটি দিন পরিশ্রমে ভরা, সেখানে স্বাস্থ্যই সবচেয়ে বড় সম্পদ। কিন্তু একটি হাসপাতাল বিল ১০,০০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক বাংলাদেশী প্রবাসী চিকিৎসা এড়িয়ে যান। ২০২৫ সালে এই চিত্র বদলে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগ (এইচএইচএস) এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে নতুন স্বাস্থ্যসেবা স্কিম চালু হয়েছে, যা প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য সাশ্রয়ী, সহজলভ্য এবং নিরাপদ চিকিৎসার দ্বার উন্মোচন করছে। এই পরিবর্তন শুধু অর্থনৈতিক সুরক্ষা নয়, বরং পরিবারের শান্তি ও ভবিষ্যতের আস্থা নিয়ে আসছে। আমেরিকাবাংলা.কম-এর এই প্রতিবেদনে আমরা এই বিপ্লবের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরব, যাতে প্রতিটি প্রবাসী এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেন।

নতুন স্কিমের নাম ‘কমিউনিটি হেলথ অ্যাক্সেস প্রোগ্রাম’। এটি বিশেষভাবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের অভিবাসীদের জন্য তৈরি, যার মধ্যে বাংলাদেশী সম্প্রদায় অন্যতম। মাসিক প্রিমিয়াম মাত্র ৫০ থেকে ১৫০ ডলারের মধ্যে, যা আয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। এর আওতায় ডাক্তার দেখানো, ওষুধ, ল্যাব টেস্ট, হাসপাতাল ভর্তি, এমনকি ছোটখাটো অপারেশনও ৮০% পর্যন্ত কভার করা হবে। নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, ক্যালিফর্নিয়া, টেক্সাসের মতো রাজ্যে এই স্কিম ইতিমধ্যে চালু হয়েছে, এবং ২০২৫-এর শেষ নাগাদ আরও ১০টি রাজ্যে সম্প্রসারিত হবে। বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায়, এই প্রোগ্রামে বাংলা ভাষায় সেবা, বাংলাদেশী ডাক্তারদের নেটওয়ার্ক এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। জ্যাকসন হাইটসের ‘লিটল বাংলাদেশ’-এ প্রথম কমিউনিটি হেলথ সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে, যেখানে বাংলায় কথা বলা যায় এবং খরচ মাত্র ১৫ ডলার প্রতি ভিজিট।

এই স্কিমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, যারা আগে ইন্স্যুরেন্স করতে পারতেন না, তারাও এখন আওতায় আসছেন। এফ-১ ছাত্র, এইচ-১বি কর্মী, গ্রিন কার্ডধারী, এমনকি অবৈধ অভিবাসীরাও আবেদন করতে পারবেন। কোনো প্রি-এক্সিস্টিং কন্ডিশন (ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা) থাকলেও বাদ পড়বেন না। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইন, এবং দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বাংলায় ফর্ম পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম তিন মাসের প্রিমিয়ামে ৫০% ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা ২০২৫-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এছাড়া, যারা বছরে ১২ মাস প্রিমিয়াম দিয়ে রাখবেন, তাদের জন্য বিনামূল্যে ডেন্টাল ও ভিশন চেকআপের সুবিধা যুক্ত হয়েছে।

তবে সুযোগের পাশাপাশি সতর্কতাও জরুরি। এইচএইচএস সতর্ক করেছে, কিছু অসাধু এজেন্ট ‘ফ্রি ইন্স্যুরেন্স’ দেখিয়ে হাজার হাজার ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। শুধুমাত্র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট healthcare.gov অথবা দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। ইন্স্যুরেন্স ছাড়া চিকিৎসা নিলে জরিমানা বেড়েছে—প্রথমবার ২,৫০০ ডলার, দ্বিতীয়বার ৫,০০০ ডলার। এছাড়া, জরুরি চিকিৎসার জন্য ৯১১ কল করলেও পরে ইন্স্যুরেন্স না থাকলে বিল দিতে হবে। বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসীদের জন্য হেল্পলাইন চালু করেছে—+১ (২১২) ৮৬৭-০৩০০—যেখানে বাংলায় পরামর্শ পাওয়া যায়।

এই স্বাস্থ্যসেবা বিপ্লব প্রবাসী বাংলাদেশীদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলবে। নিউ ইয়র্কের একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার, আব্দুল মালেক, বলেন, “আগে ডাক্তার দেখাতে ভয় পেতাম। এখন মাসে ৬০ ডলারে পুরো পরিবার কভার। এটা আমার জীবন বদলে দিয়েছে।” একইভাবে, ক্যালিফর্নিয়ার একজন গৃহিণী জানান, তার সন্তানের অ্যাজমার চিকিৎসা এখন বিনা খরচে হচ্ছে। এই স্কিমের ফলে হাসপাতালে বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা ৪০% বেড়েছে, কিন্তু বিলের চাপ কমেছে। এটি শুধু স্বাস্থ্যের নয়, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতারও প্রশ্ন।

প্রবাসী ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে বলা যায়, এই সুযোগ আপনার জন্য। স্বাস্থ্যই জীবনের মূলধন, আর এই স্কিম তা সুরক্ষিত রাখার হাতিয়ার। ২০২৫ সালে সচেতন থাকুন, আবেদন করুন, সতর্ক থাকুন। আপনার পরিবারের হাসি, আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ, আপনার শান্তি—সবই এই সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। আজই পদক্ষেপ নিন, কারণ সুস্থ থাকার অধিকার শুধু স্বপ্ন নয়, এখন বাস্তব।

আরও দেখুন

নেতিবাচক জনমত জরিপের ফলে অভিবাসন প্রয়োগ কৌশল বদলাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন!

ইমা এলিস | নিউইয়র্ক প্রতিনিধি: নেতিবাচক জনমত জরিপের চাপে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ (ডিএইচএস) অভিবাসন …